ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ১০,০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ
কোভিড-১৯ মহামারীতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে ঋণ সুবিধা না পাওয়া অতি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের সহায়তায় আবার নতুন করে ১০,০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে এই তহবিল গঠন করা হবে, যা মাইক্রো ফাইন্যান্স (এমএফআই) প্রতিষ্ঠানগুলো ৮ শতাংশ সুদে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করবে, যার অর্ধেক সরকার ভর্তুকি দেবে। বাকি ৪% ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবে।
গত ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যে ওই খসড়া নীতিমালা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে অর্থবিভাগের মতামত নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ৩১ মার্চ অর্থবিভাগের মতামতের জন্য খসড়াটি পাঠানো হয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতিতে কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) সহায়তা করতে গত বছর এপ্রিলে ২০,০০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করে সরকার, যা ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯ শতাংশ সুদে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি দেবে।
মাইক্রো ও প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক উদ্যোক্তা ব্যাংকের বিভিন্ন শর্ত মেনে ঋণ পাচ্ছে না বলে তখন থেকেই ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলে আসছিলেন। তার প্রেক্ষিতে সহজ শর্তে এমএফএসগুলোর মাধ্যমে এ ধরণের উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ বাড়াতে নতুন একটি তহবিল গঠন করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে (এফআইডি) নির্দেশনা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
গত বছর নভেম্বরে ১০,০০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়ে তা চূড়ান্ত করে ওই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থবিভাগে প্রস্তাব পাঠায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বাজেট থেকে বরাদ্দ দিয়ে এই তহবিল গঠন সম্ভব নয় বলে তা ফেরত দেয় অর্থবিভাগ। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব উদ্যোগে ১০,০০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনে সম্মতি দেওয়ার পর নতুন করে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।
এফআইডির যুগ্ম সচিব মৃত্যুঞ্জয় সাহা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ১০,০০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের খসড়া নীতিমালার বিষয়ে অর্থবিভাগের মতামত চাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক মতামত পাওয়া গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তহবিল গঠনের সার্কুলার জারি করবে।
অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মঙ্গলবার টিবিএসকে বলেন, খসড়া নীতিমালাটির বিষয়ে অর্থবিভাগ এখনও মতামত দেয়নি। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ মার্চ পর্যন্ত বিদ্যমান সিএমএসএমই প্যাকেজ থেকে ৯১,৪৩৪ জন উদ্যোক্তা ১৪,৪৬৫ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন। ঋণ পাওয়াদের বড় অংশই মাঝারি শিল্প ব্যবসায়ী বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
প্রস্তাবিত পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, তফসিলি ব্যাংকগুলো এই স্কিমের আওতায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) হতে এমএফআইগুলোকে অর্থায়ন করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিল যোগানের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কোন চার্জ নেবে না, ব্যাংকগুলোও এমএফআইগুলোর উপর কোন চার্জ আদায় করবে না। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে ভর্তুকি হিসেবে ০.৫% হারে এবং ব্যাংকগুলোকে ১% হারে সুদ বা মুনাফা পরিশোধ করবে।
এই তহবিল থেকে কুটির শিল্প সর্বোচ্চ ১০ লাখ, মাইক্রো শিল্প বা ব্যবসা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ এবং ক্ষুদ্র শিল্প বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবে। দুই বছর মেয়াদি ঋণের ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। গ্রাহকরা কুটির, মাইক্রো বা ক্ষুদ্র- যেকোন একটি ক্যাটাগরিতে একবারই ঋণ নিতে পারবে।
তহবিলের ন্যূনতম ৬০ ভাগ উৎপাদন ও সেবাখাতে এবং বাকি ৪০ শতাংশ ট্রেডিংখাতে ঋণ বিতরণ করা হবে। গ্রাহক নির্বাচনে নারী উদ্যোক্তা, অনগ্রসর গোষ্ঠীভুক্ত এবং কোভিডকালে কর্ম হারিয়ে বিদেশ প্রত্যাগত এবং দেশের শহরাঞ্চল, শিল্পাঞ্চল ও বন্দর এলাকা হতে প্রত্যাগত স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কুটির ও মাইক্রো শিল্পের উদ্যোক্তারা গ্রুপভিত্তিক ঋণও নিতে পারবে। এক্ষেত্রে গ্রুপের ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা ৫ জন হতে হবে। নির্বাচিত গ্রাহকরা ঋণের আবেদনের সঙ্গে ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ, প্রযোজ্যক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স বা পৌরসভার কাউন্সিলর অথবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র এবং দু'জন ব্যক্তির গ্যারান্টি দিয়ে ঋণ পাবেন।