চট্টগ্রামে ভ্যাট আদায় বাড়াতে বসছে ৪০০টি ইলেকট্রনিক ডিভাইস
ভ্যাট আদায় বাড়াতে নতুন চারশ ইএফডি (ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) মেশিন বসাতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন ৮ টি বিভাগে এসব ইএফডি মেশিন বসানো হবে ।
এর পাশাপাশি প্রতিমাসে ৮ টি বিভাগে একযোগে ২ দিনব্যাপী ভ্যাট মেলার আয়োজন করছে ভ্যাট কমিশনারেট। ইএফডি মেশিন এবং ভ্যাট মেলাসহ নানামুখী উদ্যোগে গত ২ অর্থবছরের ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি কাটিয়ে আগামীতে ভ্যাট আদায়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
ইএফডি মেশিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় সার্ভারের সাথে সংযুক্ত থাকবে। ক্রেতা মূল্য পরিশোধের সময় সাথে সাথে আরোপিত ভ্যাট আলাদা হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ভ্যাট মেলা আয়োজনের ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ভ্যাট ফাঁকি রোধে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বসানো হচ্ছে ইএফডি মেশিন। এর ফলে চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা আমাদের'।
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট ৮ টি বিভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে আগ্রাবাদ বিভাগ, চান্দগাঁও বিভাগ, চট্টলা বিভাগ, রাঙামাটি বিভাগ, পটিয়া বিভাগ, কক্সবাজার বিভাগ, খাগড়াছড়ি বিভাগ এবং বান্দরবান বিভাগ।
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় ৫ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। লক্ষমাত্রার চেয়ে ৬ মাসে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। যেটি লক্ষমাত্রার চেয়ে ২৯ দশমিক ৬৯% কম।
ভ্যাট কমিশনারেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ পজিটিভ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও পরবর্তী বছরগুলোতে সেটি অব্যাহত থাকেনি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্জিত হয় মাইনাস ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও মাইনাস ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট এর ডেপুটি কমিশনার সাইদ আহমেদ রুবেল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড, মিষ্টান্ন ভান্ডার, বিউটি পার্লার, তৈরি পোশাকের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জিমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বসানো হচ্ছে ৪০০ ইএফডি মেশিন। এর আগে বিভিন্ন বিভাগে গত বছরের আগষ্টে ২০টি এবং সেপ্টেম্বরে ১০০টি ইফডি মেশিন বসানো হয়। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন ৪০০টি মেশিন বসলে এই সংখ্যা দাড়াবে ৫২০'।
তিনি আরো বলেন, 'ভ্যাট আইনানুযায়ী বাংলাদেশে যে সব ব্যবসায়ীদের বাৎসরিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বেশি তারা ভ্যাটের আওতাধীন হবে। চট্টগ্রামে প্রাথমিক জরিপ চালিয়ে ৯০০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ইএফডি ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো তালিকা করা হবে'।
প্রতি মাসে আয়োজন করা হচ্ছে দুই দিনের ভ্যাট মেলা
ভ্যাট আদায় বাড়াতে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট প্রতিমাসে ৮ টি বিভাগে একযোগে ২ দিনের ভ্যাট মেলা আয়োজন করছে । গত ১১ ও ১২ জানুয়ারি ভ্যাট মেলা আয়োজনে এসেছে সফলতাও। দেশের ১২ টি ভ্যাট কমিশনারেটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট রিটার্ন জমা হয়েছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট এর মেলায়।
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে কর মেয়াদে অনলাইনে সারা দেশে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৮৯ হাজার ৬২৮টি। এর মধ্যে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামে জমা পড়েছে ১৬ হাজার ২৭৫টি। যেটি সারা দেশের ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের মধ্যে সর্বোচ্চ। চট্টগ্রাম মোট ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ২৭ হাজার ৪২৭টি। অনলাইনে দাখিল করা রিটার্নের হার মোট নিবন্ধনের ৬০ শতাংশ।
১০২৩ টি মামলায় বকেয়া ১৯৩৪ কোটি টাকা
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন ৮ টি বিভাগে ১০২৩ টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২০-২৫ বছরের অনেক পুরনো মামলাও রয়েছে বলে জানায় ভ্যাট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার অনুরূপা দেব বলেন, আপিলাত ট্রাইবুনালে দায়েরকৃত আপিল, হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট মামলা, সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এসব মামলায় জড়িত রাজস্বের পরিমান ১ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা।
বকেয়া ভ্যাট রাজস্বের পরিমান সবচেয়ে বেশি আগ্রাবাদ বিভাগে। এই বিভাগে ২৭২ টি মামলার অধীনে ৬৮৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া চান্দগাঁও বিভাগে ২০২ টি মামলায় ৫০৫ কোটি টাকা, চট্টলা বিভাগে ২৭৬ টি মামলায় ১৯০ কোটি টাকা, রাঙ্গামাটি বিভাগে ২৯ টি মামলায় ৩৪ কোটি টাকা, পটিয়া বিভাগে ৮৯ টি মামলায় ১৫১ কোটি টাকা, কক্সবাজার বিভাগে ৩৩ টি মামলায় ৪৪ কোটি টাকা, খাগড়াছড়ি বিভাগে ১১৮ টি মামলায় ৩০৯ কোটি টাকা এবং বান্দরবান বিভাগে ৪ টি মামলায় ১৫ কোটি টাকা ভ্যাট রাজস্ব বকেয়া রয়েছে।