চট্টগ্রামে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে আইসিডি বানাবে সাইফ পাওয়ারটেক
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নতুন আইসিডি (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) নির্মাণ করতে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অদূরে হালিশহর এলাকায় রেলওয়ের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের পার্শ্বে রেলওয়ের মালিকানাধীন ২১ দশমিক ২৯ একর জায়গায় নির্মিত হবে এই আইসিডি।
উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে বছরে প্রায় ১ লাখেরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করা যাবে। এতে বছরে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫০০ লোকের।
নতুন আইসিডি নির্মাণের লক্ষ্যে আগামী ১৯ অক্টোবর ঢাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিষ্ঠান কন্টেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ (সিসিবিএল) এর সাথে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে।
রেলপথে কন্টেইনার পরিবহন বাড়াতে ২০১৬ সালের ১৭ মে সিসিবিএল নামে একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামে আইসিডি নির্মাণের জন্য সিসিবিএলের অনুকূলে ২১ দশমিক ২৯ একর জায়গা বরাদ্দ দেয় রেলওয়ে।
ওই জায়গায় আইসিডি নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি কনস্ট্রাকশন অব আইসিডি কাম অফডক থ্রো ডিবিএফওএমটি মুডে (ডিজাইন, বিল্ড, ফাইনান্স, অপারেশন, মেনটেইনেন্স এন্ড ট্রান্সফার) টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল শুরু হয় দরপত্র বিক্রি। সাড়ে তিন মাসের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে সাইফ পাওয়ারটেককে নির্বাচিত করে সিসিবিএল।
সিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, আইসিডি নির্মাণের জন্য বিদেশী চারটি প্রতিষ্ঠান সহ মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠান শিডিউল কেনে। টেন্ডারে কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনা, নূন্যতম ৫০ হাজার টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং সহ আইসিডি সেক্টরে অভিজ্ঞতার শর্ত ছিলো। কিভাবে জায়গা ডেভেলপ করবে তার নকশা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, আইসিডি পরিচালনার পরিকল্পনা দেওয়ারও শর্ত ছিলো। অভিজ্ঞতা না থাকায় শিডিউল কেনার পরও ১৩টি প্রতিষ্ঠান জমা দেয়নি।
তিনি আরো বলেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আইসিডির নির্মাণ ও পরিচালনা করবে সাইফ পাওয়ারটেক। সাইনিং মানি হিসেবে সিসিবিএলকে ৭ কোটি টাকা দেবে। আইসিডি পরিচালনা করে যে লাভ হবে তার ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ সিসিবিএলকে দেবে সাইফ পাওয়ারটেক। এতে বিনিয়োগ হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। আধুনিক ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করলে বছরে ১ লাখেরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করা সম্ভব এই আইসিডিতে।
বর্তমানে চট্টগ্রামে ১৯টি বেসরকারী আইসিডি রয়েছে। জাহাজীকরণের জন্য শতভাগ রপ্তানি পণ্য কন্টেইনার বোঝাই হয় আইসিডি থেকে। এছাড়া ৩৮ ধরনের খাদ্য পণ্য সহ অন্যান্য পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় এসব বেসরকারি আইসিডি থেকে। ১৯টি আইসিডিতে বছরে গড়ে ১৮ লাখ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং হয়। নতুন আইসিডিও পরিচালিত হবে একই নিয়মনীতির আলোকে।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯২ ভাগ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পাদিত হয়। দেশের মোট পরিবাহিত ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এসব কন্টেইনারের ৮০ শতাংশ পরিবহন হয় সড়কপথে। ১৬ শতাংশ হয় নৌপথে। বাকী ৪ ভাগ হয় রেলপথে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা-কমলাপুর আইসিডি রুটে এসব কন্টেইনার পরিবহন হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে প্রায় ৩০ লাখ টিইইউস (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং হয়। এর প্রায় ৬৫ ভাগ সম্পন্ন করে সাইফ পাওয়ারটেক। চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি (চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল) এবং এনসিটি (নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল) পরিচালনা করছে সাইফ পাওয়ারটেক। এর মধ্যে এনসিটিতে ৫টি এবং সিসিটিতে ২ জেটি রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত সাইফ পাওয়ারটেক। চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও মোংলা বন্দরে দুটি জেটি নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ঢাকা-কমলাপুর আইসিডি পরিচালনায়ও যুক্ত সাইফ পাওয়ারটেক।
সিসিবিএল সূত্র জানায়, যে জায়গায় আইসিডি নির্মাণ করা হবে সেই জায়গায় কিছু অংশ ডোবা। আইসিডি নির্মাণের জন্য উপযোগী করতে হলে সেখানে হেভি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রয়োজন। চুক্তির পর আইসিডির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করতে সাইফ পাওয়ারটেক সময় পাবে ২ বছর। তহবিল সংগ্রহ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ, সিটি কর্পোরেশন সহ বিভিন্ন সংস্থার অনুমতির জন্য ৬ মাস সময় পাবে সাইফ পাওয়ারটেক। এরপর ১৫ মাস কনস্ট্রাকশন এবং পরীক্ষামূলক পরিচালনার জন্য সময় পাবে ৩ মাস।
সাইফ পাওয়ারটেক আইসিডি পরিচালনা, ফি আদায় সহ সকল ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আইসিডির কার্যক্রম পরিচালনা মনিটরিংয়ে আইসিডি চত্বরে অফিস থাকবে সিসিবিএলের।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ২০ বছর পর সম্পূর্ণ চালু অবস্থায় আইসিডি সিসিবিএলের কাছে হস্তাস্তর করবে সাইফ পাওয়ারটেক। পরবর্তীতে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে পরিচালনাকারী সংস্থা নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে বিজিএমইএ'র ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন আইসিডি নির্মিত হওয়াকে আমরা সাধুবাদ জানাই।