চট্টগ্রাম বন্দর ও আইসিডিতে বাড়ছে কন্টেইনারের চাপ
চট্টগ্রাম বন্দর এবং আইসিডিতে আমদানি- রপ্তানি পণ্যবাহী এবং খালি কন্টেইনারের চাপ বাড়ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ঈদকে সামনে রেখে অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে আমদানিকারক সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিলেও তার সুফল মেলেনি।
আমদানিকারকরা সময়মতো পণ্য ডেলিভারি না নেওয়ায় রমজান শুরুর পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বুধবার বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনারের সংখ্যা ছিল ৩৫,৮৯৬ টিইইউস (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট); বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, এক মাস আগেও যা ছিল ২৫,০০০ টিইইউস।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি আইসিডিতেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ রপ্তানি এবং ৩৫ শতাংশ খালি কন্টেইনারের স্টক বেড়েছে। ঈদের টানা ৫ দিনের ছুটি থাকায় এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন আইসিডি মালিকরা।
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারি কমে যাওয়ায় ইয়ার্ডগুলোতে কন্টেইনারের চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারি হয় চার থেকে সাড়ে চার হাজার। গত এক মাসে এই সংখ্যা নেমে এসেছে আড়াই থেকে তিন হাজারের মধ্যে।
সম্ভাব্য কন্টেইনার জট এড়াতে তথা যথাসময়ে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ডেলিভারি নিতে গত ৩০ মার্চ সকল স্টেকহোল্ডারদের চিঠি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, বিজিএমইএ, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের চিঠি দিয়েও ডেলিভারিতে আশানুরূপ সুফল মেলেনি।
চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "সময়মতো কন্টেইনার ডেলিভারি না নেওয়ায় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বিঘ্ন হচ্ছে। আমরা আশা করেছিলাম, আমদানিকারকরা নিজেদের ওয়্যারহাউস, গুদাম ও ফ্যাক্টরি খোলা রেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে কন্টেইনারগুলো খালাসের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়েও অবস্থার উন্নতি হয়নি।"
বিজিএমইএ'র ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, "বন্দর চিঠি দেয়ার পর আমরাও আমাদের সংগঠনের সকল সদস্যকে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। কারখানাগুলোতে কার্যাদেশ কমে যাওয়ায় অনেক আমদানিকারক হয়তো তাদের কাঁচামালগুলো ডেলিভারি নিচ্ছে না। আশা করছি বন্দর ইয়ার্ডে থাকা কাঁচামাল দ্রুত খালাস করবে কারখানা মালিকরা।"
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কন্টেইনার ধারণ সক্ষমতা ৫৩,৫১৮ টিইইউস। গত ১ মার্চ বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিলো ২৫,১৮৯ টিইইউস। এরপর ক্রমাগত বাড়তে থাকে কন্টেইনারের সংখ্যা।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম টিবিএসকে বলেন, "বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখতে সকল স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে যেসব আমদানিকারকের পণ্য রয়েছে সেগুলো ডেলিভারি নেওয়ার অনুরোধ জানাই।"
আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) তথ্য অনুযায়ী, ১৯টি আইসিডিতে খালি কন্টেইনারের একটি বিশাল চাপ রয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) আইসিডিগুলোতে খালি কন্টেইনার ছিলো ৫৪,৫৩২ টিইইউস। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রামের ১৯টি আইসিডিতে খালি কন্টেইনারের স্টক থাকে ৩৫ হাজার টিইইউস।
ঈদের আগে আইসিডিগুলোতে রপ্তানিমুখী কন্টেইনারেরও প্রচন্ড চাপ থাকে। ঈদের ছুটির আগে জাহাজের শিডিউলের এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে পণ্য কন্টেইনার বোঝাইয়ের জন্য আইসিডিতে পাঠিয়ে দিতো। কাভার্ডভ্যান ভর্তি পণ্য নিয়ে চালকরা আইসিডি গেইটে অপেক্ষায় থাকতো ১০ দিনেরও বেশি। এর ফলে ট্রাক কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া বেড়ে যেতো দ্বিগুণ।
তবে এবার সে ধরনের পরিস্থিতি না হলেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় এক হাজারের বেশি রপ্তানি কন্টেইনার রয়েছে। ঈদের আগে এর সংখ্যা আরো বাড়বে।
বিকডার সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার টিবিএসকে বলেন, গত ১৫ দিনে আইসিডিগুলো থেকে ২৫,১৫৩ টিইইউস রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে আইসিডিগুলোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার থাকে ছয় থেকে সাত হাজার। ঈদের আগ পর্যন্ত রপ্তানি কন্টেইনার আরো বাড়বে।