চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস: ১১ মাসেই ছাড়িয়ে গেছে গত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ
দেশের সবচেয়ে বড় শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১ মাস বাকি থাকতেই ছাড়িয়ে গেছে গত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। গত অর্থবছরের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২,৯০২.১৭ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪১,৮৫৩.৮৬ কেটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৪,৭৫৬.০৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে মে মাস পর্যন্ত সময়ে গত অর্থবছরের তুলানায় ৭,১৫০ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩৭,৬০৬.০২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, অর্থবছরের শুরুতে ৩ মাস রাজস্ব আদায়ে ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি হলেও পরবর্তীতে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।
তবে চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব লক্ষমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার ৫০৫ দশমিক ১৪ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। শতকরা হিসেবে লক্ষমাত্রার চেয়ে আদায়ের ব্যবধান ২৪.৪৮ শতাংশ কম।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসে গত বছরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে। করোনার প্রভাবে গত অর্থবছরে মাইনাস ৩.৯৬ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, উচ্চ শুল্কের বেশ কিছু পণ্য আমদানির পরিমাণ কমে গেছে। যার কারণে লক্ষমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ের একটি ব্যবধান চলতি অর্থবছরেও থেকে গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের গত ২৬ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের তথ্য পর্যালোচানায় দেখা যায় শুধুমাত্র ৫ অর্থবছরে ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। এর মধ্যে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে মাইনাস ৫.১৯ শতাংশ ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে। যেটি ছিল মাইনাস ৩.৯৬ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জন্য সংশোধিত রাজস্ব লক্ষমাত্রা ৬৪৩০৩.৬০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত রাজস্ব লক্ষমাত্রা ৫৯২৬১.১৭ কোটি টাকা। এই লক্ষমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৪৭৫৬.০৩। ১১ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ১৪,৫০৫.১৪ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে ১১ মাসে লক্ষমাত্রার চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৮ ভাগ রাজস্ব কম আদায় হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাইতে ৩২৯৩.৫৩ কোটি টাকা, আগষ্টে ৩২৬৪.৮৬ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ৩৮১৬.২৬ কোটি টাকা, অক্টোবরে ৩৮৭১.০৮ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৩৭৭০.০৩ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে ৩৬৪৮.৬৬ কোটি টাকা, জানুয়ারিতে ৪০৮০.১১ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৪২১০.৪০ কোটি টাকা, মার্চে ৫০৭৬.৭২ কোটি টাকা, এপ্রিলে ৪৭৮৭.৪৫ কোটি টাকা এবং মে মাসে ৪৯৩৬.৯৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
যে কারণে লক্ষমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় কম
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় কমার কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস উচ্চ শুল্কের ২০ ধরনের পণ্য আমদানি কমে যাওয়াকে চিহ্নিত করেছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র দেখা যায়। ওই প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসের আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।
এতে গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে ২০ ধরনের পণ্য যেমন পিস্টন ইঞ্জিন, ডাবল কেবিন পিকআপ, পাম অয়েল, এয়ার কন্ডিশনিং মেশিনের অংশ, রিকন্ড মোটার গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন, লৌহঘটিত বর্জ্য এবং স্ক্র্যাপ, এফ/হট-রোল্ড, সিএনজি চালিত ৩ চাকার যান, রেফ্রিজারেটর, অন্যান্য মোটর গাড়ি, ফিনিশিং সিরামিকস, আপেল, ফ্রেশ, নেস, রেলপথ/ ট্রামওয়ে যাত্রীবাহী কোচ, ফ্ল্যাট রোল্ড প্রডাকটস, টিউব, পাইপ, ঢালাইয়ের বিভিন্ন ধাতু,পেট্রোলিয়াম বিটুমিন প্রভৃতির আমদানি কম হওয়াকে রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর বাইরে অন্যান্য পণ্য আমদানি কমেছে ৫০ ভাগেরও বেশি।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে গত অর্থ বছরের তুলনায় ৬টি এইচএস কোডের বিপরীতে মোট ৭২,৯৯৬টি গাড়ী আমদানি কম হয়েছে।