চোরাই পথে প্রবেশ বন্ধে মসলার আমদানি শুল্ক কমানোর সুপারিশ
মসলার চাহিদা পূরণে বৈধপথে আমদানির পাশাপাশি একটা অংশ চোরাই পথে দেশে প্রবেশ করছে বলে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ফলে সরকার বড় ধরনের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চোরাই পথে মসলার প্রবেশ ঠেকাতে এবং মসলাজাতীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে আসন্ন বাজেটে (২০২১-২২) জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, গোলমরিচের ওপর আমদানি শুল্ক ৫৮.৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
দেশে দুই পদ্ধতিতে মসলা আমদানি হয়। বাল্কে ও ২.৫ কেজির প্যাকেটে। শুধুমাত্র বাল্কে মসলা আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে কমিশন।
এনবিআর থেকে পাওয়া ট্যারিফ কমিশনের এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির এক আবেদনের ভিত্তিতে।
কমিশন মসলার স্থানীয় চাহিদা ও আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। দেখা গেছে, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, গোলমরিচের যে পরিমাণ স্থানীয় চাহিদা রয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি হচ্ছে না। এ সকল পণ্য পাশ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাই পথে আসছে। চোরাই পথে অনেক বেশি পণ্য আসায় যারা বৈধ পথে মসলা আমদানি করছে, তারা ক্ষতির মুখে পড়ছে।
তথ্য বলছে, দেশে সারা বছরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন জিরার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ২০১৯-২০ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিরা আমদানি হয়েছে যথাক্রমে সাড়ে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন ও সাড়ে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। একই সময়ে দারুচিনির ২০ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে আমদানি হয়েছে যথাক্রমনে প্রায় ১৬ হাজার টন ও ১২ হাজার ৯৭৫ টন।
দুই হাজার মেট্রিক টন লবঙ্গের চাহিদার বিপরীতে উল্লিখিত সময়ে ১ হাজার ৫৯৪ মেট্রিক টন ও ১ হাজার ২২২ মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে। তবে ২০১৯-২০ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এলাচ আমদানি হয়েছে যথাক্রমে ৩ হাজার ৫৮৩ মেট্রিক টন ও ৫ হাজার ৫৫২ মেট্রিক টন। যেখানে চাহিদা রয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টনের।
এছাড়া একই সময়ে আড়াই হাজার মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে গোলমরিচ আমদানি হয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৮৬৫ মেট্রিক টন ও ১ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন।
কমিশন এই তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে, এসব পণ্য পাশ্ববর্তী দেশ থেকে বৈধভাবে বিনা শুল্কে দেশে প্রবেশ করছে। ফলে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে এবং ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার শিকার হচ্ছেন।
তাই অবৈধপথে আমদানি বন্ধ করতে এবং ব্যবসায়ীদের অসম প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করতে বাল্ক আকারে গরম মসলা আমদানিতে কাস্টম ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং সম্পূরক শুল্ক (এসডি) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য এসব গরম মসলা বাল্ক আকারে আমদানিতে ২৫ শতাংশ কাস্টম ডিউটি, ৩ শতাংশ আরডি এবং ২০ শতাংশ এসডিসহ মোট ৫৮.৬০ শতাংশ শুল্ক বিদ্যমান।
কমিশন বলছে, এ ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারে সরকারের রাজস্ব হ্রাসের সম্ভাবনা কম। কারণ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বৈধ পথে আমদানিকে উৎসাহিত করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গরম মসলা চোরাই পথে দেশে এলে আমাদের মতো বৈধ আমদানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়ে। অনেক সময় লোকসান দিয়ে পণ্য বিক্রি করতে হয়। অন্যদিকে সরকারও রাজস্ব হারায়।'
তিনি বলেন, 'শুল্ক কমালে এসব পণ্য চোরাই পথে আসা অনেকটাই কমে যাবে। আবার দাম কমবে বলে অনেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে।'
মসলা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে উৎপাদন নেই বলেই এসব পণ্য আমদানি করেই চাহিদা মেটাতে হয়। একটা সময় ছিল এসব মসলাকে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো। যে কারণে এসব আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু মানুষের জীবনমান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে অনেক মানুষই এখন এসব মসলা খারারে ব্যবহার করছে এবং প্রতিনিয়তই এর চাহিদা বাড়ছে।
একই সঙ্গে, আয়ুর্বেদিক ঔষুধের কাঁচামাল হিসেবেও এসব মসলার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।