কানাডার জ্বালানি অথবা গাড়ির কোনো প্রয়োজন নেই যুক্তরাষ্ট্রের: ট্রাম্প
কানাডার জ্বালানি, যানবাহন বা কাঠের কোনো প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের নেই বলে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বৈশ্বিক ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে কথা বলার সময় জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসি'র।
ট্রাম্প তার পূর্বের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে তিনি আরও বলেছেন, প্রতিবেশী দেশটি "যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্য" হতে রাজি হলে এটি এড়ানো সম্ভব।
তিনি বলেন, "তোমরা সবসময় একটি রাজ্য হতে পারো। আর যদি তোমরা রাজ্য হও, তাহলে আমাদের কোনো ঘাটতি থাকবে না। তোমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করতে হবে না।"
ট্রাম্প কানাডার আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এটি সম্ভবত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হতে পারে।
শুল্ক আরোপের এই পুনরায় হুমকি কানাডায় গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে যখন দেশটি বাণিজ্যের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল।
কানাডা বলেছে, যদি ট্রাম্প প্রশাসন তাদের উপর শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তারা শক্তিশালী পালটা পদক্ষেপ নেবে। এর মধ্যে "ডলার-প্রতি-ডলার" প্রতিক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
কানাডার প্রায় ৭৫ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে যায়। মেক্সিকোর পরেই কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। তবে, যুক্তরাষ্ট্রে কানাডার মোট রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ১৭ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তার মন্তব্যে বলেন, কানাডাকে "বছরের পর বছর ধরে মোকাবিলা করা খুব কঠিন ছিল"।
তিনি বলেন, "আমাদের গাড়ি তৈরির জন্য তাদের প্রয়োজন নেই, আমরা অনেক গাড়ি তৈরি করি। তাদের কাঠেরও প্রয়োজন নেই, কারণ আমাদের নিজেদের বন আছে... তাদের তেল এবং গ্যাসও আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের কাছে সবার চেয়ে বেশি আছে।" ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফোরামের অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে তিনি এই মন্তব্যগুলো করেন।
ট্রাম্প আবারও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কানাডার সঙ্গে বাণিজ্যিক ঘাটতি ২০০ বিলিয়ন থেকে ২৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে। তবে তিনি কোন তথ্যসূত্র থেকে এই পরিসংখ্যানটি নিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি চাহিদার কারণে ২০২৪ সালে কানাডার সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি ৪৫ বিলিয়ন ডলার হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
উত্তর আমেরিকার গাড়ি শিল্পে উচ্চস্তরের যোগসূত্র রয়েছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডার সীমান্ত দিয়ে বারবার পারাপার করা হয়, যতক্ষণ না একটি গাড়ি পুরোপুরি নির্মাণ করা হয়।
ট্রাম্প সীমান্ত নিরাপত্তার সঙ্গে এই শুল্ক যুক্ত করেছেন বলে দাবি করেছেন। কানাডা যদি নিরাপত্তা বৃদ্ধি না করে, তবে শুল্ক আরোপ হবে বলে জানান তিনি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, শুল্ক আরোপ হলে তারা প্রতিক্রিয়া জানাবে। এতে যুক্ত রয়েছে, আমেরিকায় জ্বালানি রপ্তানির ওপর কর বা নিষেধাজ্ঞা। তবে, দেশটির কিছু প্রাদেশিক নেতা এই প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে একমত নন।
শুক্রবার ট্রুডো বলেন, কানাডার লক্ষ্য আমেরিকান শুল্ক এড়ানো, তবে তা করতে ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে যাতে শুল্ক আরোপ হলে তা দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া যায়।
কানাডা আমেরিকাকে নির্ভরযোগ্য বাণিজ্যিক অংশীদার এবং জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানির নিরাপদ উৎস হিসেবে নিজেদের তুলে ধরছে, যাতে শুল্ক এড়াতে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সমর্থন পায়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, আমেরিকা কানাডার পণ্যগুলোর ওপর জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য নির্ভরশীল।
একটি সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে কানাডা প্রায় ১৭০ বিলিয়ন ডলার জ্বালানি রপ্তানি করেছে।
শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, ব্যবসায়ীরা যদি শুল্ক এড়াতে চান, তাহলে তাদের পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করতে হবে।
শুল্ক ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি এটিকে আমেরিকার অর্থনীতি বৃদ্ধি, চাকরি রক্ষা এবং কর রাজস্ব বাড়ানোর একটি উপায় হিসেবে দেখেন।
নতুন প্রেসিডেন্ট ফেডারেল কর্মকর্তাদের ১ এপ্রিলের মধ্যে আমেরিকার বাণিজ্য সম্পর্কগুলো পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে কোনো অনুৎসাহী প্রক্রিয়া চিহ্নিত করা যায়।