জিডিপি অবদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন শিল্পনীতির পরিকল্পনা
জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় শিল্পনীতি ২০২১ প্রণয়নের কাজ চলছে। লক্ষ্য পূরণে ব্যক্তিখাতের ব্যবসা সহজ করা ও বিদেশি আকর্ষণের বিষয়টি শিল্পনীতিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে।
রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি আয়োজিত 'প্রস্তাবিত জাতীয় শিল্পনীতি: ব্যক্তিখাতের প্রত্যাশা' শীর্ষক ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক এসব কথা জানান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (নীতি) মো. সলিম উল্লাহ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ-২০২০ এর তথ্যমতে জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ৩৫.৩৬ শতাংশ, সেবা খাতের অবদান ৫১.২৯ শতাংশ এবং কৃষির অবদান ১৩.৩৫ শতাংশ। নতুন শিল্পনীতিতে জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এজন্য ব্যক্তিখাত নির্ভর শিল্পায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
মো. সলিম উল্লাহ বলেন, পাঁচটি বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নতুন শিল্পনীতিতে। ব্যক্তিখাত নির্ভর শিল্পায়নের পরিকল্পনা, উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তি উদ্যোগ সম্প্রসারণে সরকারি সহযোগিতা বাড়ানো, প্রবৃদ্ধি অর্জনে শিল্পখাতের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতায় গুরুত্ব প্রদান ও সরকারি তদারকির ব্যবস্থা, ব্যবসা সহজীকরণ সূচকের উন্নয়নের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি এবং অংশীদার ও বিশেষজ্ঞদের বাস্তবভিত্তিক অভিজ্ঞতা নিয়ে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান দেশের সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে সিএমএসএমই খাতের যথাযথ উন্নয়নে বিদ্যমান সংজ্ঞা সংশোধনের আহবান জানান, যাতে করে উদ্যোক্তাদের আর্থিক ও নীতি সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
তিনি বলেন, "প্রয়োজনে ভিয়েতনামের শিল্পনীতি অনুসরণ করার পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং ই-কমার্স শিল্পের অগ্রযাত্রাকে গুরুত্ব দেওয়াও জরুরি।"
আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুদ্দীন মোনেম বলেন, "নতুন শিল্পায়নের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন করা যাবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভূমি বন্দোবস্ত কার্যক্রম দ্রুত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান ভূমি আইনকে সংশোধন ও আমূল সংষ্কার এবং জমির মূল্য যৌক্তিক হারে কমানো প্রয়োজন।"
তিনি আরও বলেন, "দেশে হোন্ডা কোম্পানির বিনিয়োগের কারণে এখন হোন্ডা উৎপাদনে ব্যবহৃত ২২টি পার্টসের মধ্যে ১৩টিই দেশে তৈরি হচ্ছে। এটাই আমাদের সক্ষমতা। সুতরাং এফডিআই আকর্ষণে নীতি ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।"
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, "সরকারি বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো, দক্ষ ব্যকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প প্রতিষ্ঠা, গবেষণার মাধ্যমে দেশীয় প্রযুক্তির প্রসার, সিএমএসএমই খাতের দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়গুলো নীতিমালায় প্রধান্য পাবে।"
তিনি বলেন, "সিএমএসএমই খাত অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এ খাতের বিকাশে আর্থিক ও নীতি সহায়তা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া নতুন নীতিতে অংশীদারদের মহামতকে প্রাধান্য দিয়েই নীতিটি চূড়ান্ত করা হবে। এজন্য যেকোনো ধরনের প্রস্তাবকে সরকার গ্রহণ করবে।"
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, "দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা, পণ্যের গুণগতমান সংরক্ষণ, মেধাসম্পদ ব্যবস্থাপনা, এসএমইর সঠিক সংজ্ঞায়ন, ক্লাস্টরভিত্তিক শিল্প পার্ক গড়ে তোলা, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকর্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ও অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করাই জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ এর মূল লক্ষ্য।"
জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ এর মেয়াদ চলতি বছর শেষ হবে। আর সে কারণেই নতুন করে শিল্পনীতি তৈরি করা হচ্ছে।
নতুন এ নীতিতে আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন বাড়ানো, রপ্তানিমুখী পণ্যের শিল্পায়নকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।