জুলাই-অক্টোবরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে ১৮৩%
সঞ্চয়পত্র বিক্রি চলতি অর্থ বছরের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্য থাকলেও প্রথম চার মাসেই নিট বিক্রি সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত সাপ্তাহিক সিলেকটেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস এ এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
গেল অর্থ বছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫,৫২১ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে তা ১০,১২১ কোটি টাকা বেড়ে নিট বিক্রি হয়েছে ১৫,৬৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ বা ১৮৩ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চার মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির যে পরিমাণ তাতে নভেম্বর মাসের তথ্য পেলেই হয়তো দেখা যাবে বিক্রি ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ব্যাংক আমানতের সুদহার কমে যাওয়া এবং সাধারণ মানুষের জন্য আর কোন সঞ্চয় ইন্সট্রুমেন্ট না থাকায় সেভিং সার্টিফিকেট বিক্রি বাড়ছে।
তিনি আরো বলেন, আগে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের সুদহারের পার্থক্য ছিল ৪ শতাংশের মত। এখন সেই পার্থক্য ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ জন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রির বাড়াটা স্বাভাবিক বলে তার অভিমত।
বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার অন্যতম বড় কারণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়া। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে সরকারের ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৬৩ কোটি টাকা, যা গেল অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে আহসান মনসুর বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সরকারকে ৩ থেকে ৪ শতাংশের মত সুদ পরিশোধ করতে হয়।
কিন্তু সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে গড়ে ১১.৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে চলতি অর্থ বছরে সুদ জনিত ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। এটি বাজেটে চাপ বাড়াবে বলে তিনি মনে করেন।
সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ বাড়লেও বিক্রিতে স্বচ্ছতা আনতে অনলাইন ব্যবস্থা চালু ও কর সনাক্তকরণ নম্বর বাধ্যতামূলক করায় অনেকে নিরুৎসাহিতও হচ্ছেন বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, সঞ্চয়কারীদের নিরুৎসাহিত করা ঠিক হবে না।
বড় বড় সঞ্চয়কারীদের সুযোগ না দিয়ে বরং ছোট সঞ্চয়কারীদের জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সীমা আরো বাড়ানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।
তিনি জানান, বর্তমানে এক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়লেও ভাঙ্গানোর প্রবণতাও বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পরযন্ত প্রতি মাসেই সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানোর প্রবণতা বেড়েছে। জুলাইয়ে ভাঙ্গানোর পরিমাণ ছিল ৫ হাজার কোটি টাকা। আগস্টে তা বেড়ে ৫,১০৫ কোটি টাকা এবং সেপ্টেম্বরে আরো বেড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িছে।
করোনায় আয় কমে যাওয়ার ফলে অনেকে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গিয়ে ফেলছেন। এমন মন্তব্য করে আহসান মনসুর বলেন, তবে টিন নাম্বার বাধ্যতামূলক করায় আয়কর রিটার্ন দিতে হবে, এমন বিবেচনায় অনেকে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গিয়ে ফেলছেন এবং এই সংখ্যাটাই বেশি।