ধামাকার কোনো অনুমোদন ও লাইসেন্স নেই: র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত কর্মকর্তারা
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম 'ধামাকা শপিং ডট কম' এর কোন প্রকার অনুমোদন ও লাইসেন্স নেই, নেই ব্যবসায়িক একাউন্টও। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধামাকা শপিংয়ের আটক ৩ কর্মকর্তা র্যাবকে এ কথা জানিয়েছে।
আজ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এলিট ফোর্সটি জানিয়েছে, ব্যবসা পরিচালনায় ঢাকা বেসড সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের একাউন্টের মাধ্যমে এর ব্যবসায়িক লেনদেন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ধামাকা শপিং ডট কম ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে মূলত 'ইনভেনটরি জিরো মডেল' এবং 'হোল্ড মানি প্রসেস প্লান' অনুসরণ করত। কয়েকটি দেশি-বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারের আলোকে ধামাকা শপিংয়ের ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কোন বিনিয়োগ ছিল না বলেও গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়।
চলতি বছরের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটি তার অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পর জুলাই থেকে এর সব কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
ফলস্বরূপ, অফিস এবং ডিপোর ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি; জুন মাস থেকে বেতন পায়নি প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরাও।
ব্রিফিংয়ে র্যাব জানায়, কোম্পানিটির কাছে সেলার বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৮০-১৯০ কোটি টাকা এবং কাস্টমারদের বকেয়া ১৫০ কোটি টাকা।
২০২০ সাল হতে ধামাকা শপিং ডট কম নামে কার্যক্রম শুরু করে তারা। গ্রেপ্তারকৃতরাও সবাই ২০২০ সাল থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সাথে যুক্ত রয়েছেন। গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নেতিবাচক এগ্রেসিভ স্ট্র্যাটেজি নিয়ে মাঠে নামে।
আজ বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ধামাকা শপিংয়ের সিওও (চিফ অপারেটিং অফিসার) সিরাজুল ইসলাম রানাসহ তিনজনকে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এর আগে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ধামাকা শপিং ডট কমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গাজীপুরের টঙ্গী থানায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে টঙ্গীর উত্তর আউচপাড়া এলাকার শামিম খান নামের এক ব্যবসায়ী মামলা করেন।
এছাড়া গত ১০ সেপ্টেম্বর ধামাকা শপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএমডি জসিম উদ্দিন চিশতিসহ তার স্ত্রী-দুই সন্তান ও এক ভাতিজা এবং ধামাকা শপিংয়ের আরেক পরিচালকসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের মামলা করে সিআইডি।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, এই টাকার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন ধামাকা শপিংয়ের এমডি ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ধামাকা শপিং প্রায় ৫ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন লোভনীয় অফারে পণ্য দেওয়ার নামে ৮০৩.৫১ কোটি টাকা গ্রহণ করে। শুরুতে কিছু গ্রাহককে পণ্য দিলেও পরবর্তীতে আর কাউকেই পণ্য না দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে তারা।
শুধু তাই-ই নয়, ধামাকা শপিং পণ্য সরবরাহকারী ৬০০ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকার পণ্য নিলেও এ পর্যন্ত কোনো টাকা পরিশোধ করেনি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবসমূহের জমা ও উত্তোলন স্লিপ এবং দেশের বাইরে সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলে পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
ধামাকা শপিংয়ের বিষয়ে গত ৩০ জুন থেকে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্সের নামে বিভিন্ন পণ্যের লোভনীয় অফার ও ভার্চুয়াল সিগনেচার কার্ড বিক্রি করে অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে নামে সিআইডি।
মামলায় আসামিরা হলেন- ধামাকা শপিংয়ের ও ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএস জসিম উদ্দিন চিশতি, তার স্ত্রী ও ইনভেরিয়েন্ট টেলিকমের পরিচালক সাইদা রোকশানা খানম, তার ছেলে ও ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজিসের চেয়্যারম্যান তাসরিফ রিদয়ান চিশতি, ছেলে ও ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজিসের পরিচালক মাসফিক রিদয়ান চিশতি, ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজিসের এমডি নাজিমুদ্দিন আসিফ এবং ধামাকা শপিং ও ইনভেরিয়েন্ট টেলিকমের পরিচালক সাফওয়ান আহমেদ।
এছাড়াও মামলায় ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রো ট্রেড, ইনভেরিয়েন্ট টেকনোলজিস লিমিটেড ও মাইক্রো ট্রেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডকেও আসামি করা হয়েছে।