নতুন আয়কর আইন প্রণীত হলে কর ফাাঁকির প্রবণতা কমবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
সরকার যে নতুন আয়কর আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি বেশ সহজে প্রয়োগযোগ্য হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইনটি প্রণীত হলে, পুরাতন আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ তে কিছু কঠিন বিধান ও দুর্বোধ্য বিষয় থাকার অযুহাতে আয়কর ফাকি দিতে অনেকেই মামলা করে। নতুন আইনটি হলে সেই পথ অনেকটাই বন্ধ হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম।
এদিকে নতুন আইনটি প্রণয়নের আগে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে একটি অত্যাধুনিক আইন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'আয়কর চেয়ে কারো কাছে চিঠি গেলেই ভয় ও আশঙ্কার মধ্যে পড়ে যায়। নতুন আইনটি এমনভাবে করতে হবে, যাতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ভয় না থাকে। কর দিতে যাতে সকলেই উৎসাহ বোধ করে।'
তিনি বলেন, 'আইনটি দ্রুত প্রণয়ন করার দরকার। যাতে আগামী অর্থবছর থেকেই এই আইনটি কার্যকর করা সম্ভব হয়।'
বৃহস্পতিবার আয়কর আইন-২০২২ এর খসড়া নিয়ে এনবিআর আয়োজিত এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান এবং প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় বিসিএস (কর) একাডেমি মিলনায়তনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর মাধ্যমে আয়করের বিধিবিধান ঠিক করা হয়। অধ্যাদেশটি প্রধানত ১৯২২ সালের আয়কর আইনের ধারাবাহিকতা। দেশে আয়কর আইনের বিধিবিধান ১০০ বছরের পুরোনো। এ সময়ের মধ্যে দেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামো ও ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিবর্তন এসেছে। আবার সরকার সব আইন বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বাংলা ভাষায় নতুন আয়কর আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আইনের খসড়া তৈরি করেছে এনবিআর। এখন বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
খসড়া আইন সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরও আগে আইনটি করা দরকার ছিল। আয়কর আইনের অনেক জায়গায় স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আইনের একটি ধারায় অনেক উপধারা, আবার উপধারারও সেকশন দিয়ে এতদিন যেভাবে চলছে, তা সহজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেক বিষয় আইনের বাইরে রেখে বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যখন কার্যকর হবে, তখন আন্তর্জাতিকভাবে উত্তম চর্চা সন্নিবেশিত আইন হবে। নতুন আইনের ফলে অস্পষ্টতা দূর হবে। কর আহরণ সহজ হবে।
সেমিনারে বলা হয়, বর্তমান আইনে অডিট নির্বাচন ও অডিট কার্যক্রম পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপদ্ধতি নেই। প্রস্তাবিত আইনে এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। এতে অডিট-সংক্রান্ত স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। খসড়া আইনে ই-কর ব্যবস্থাপনার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। অনিবাসী কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে সুদ বাবদ অর্থ পাঠাতে হলে সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্য দিয়ে পাঠাতে হবে।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ ট্রান্সফার প্রাইসিং ও কর এড়ানো প্রতিরোধের বিধানাবলি যুক্ত করা হয়েছে। উৎসে কর কাটা ও সংগ্রহের নিয়ম আরও স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে নিবাসী ও অনিবাসীদের থেকে উৎসে কর কাটা ও সংগ্রহে কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না। আইনে লোকসান সমন্বয় ও জের টানার নিয়ম অত্যন্ত সহজ করা হয়েছে। আগে যেসব অনুমিত আয় এসআরওর মাধ্যমে হিসাব করা হতো, প্রস্তাবিত আইনে সেগুলো মূল আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যবসায়িক খরচ অনুমোদনের আইনের বিধান আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক নতুন বিষয় রয়েছে, যা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের পাশাপাশি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক কর প্রশাসন নিশ্চিত করবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন এনবিআর (আয়কর নীতি) সদস্য মো. আলমগীর হোসেন। এছাড়াও অংশ নেন বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।