নন-বন্ড রপ্তানিকারকদের কাঁচামাল ক্রয়ের সুবিধার্থে ভ্যাট আইনে সংশোধন আসতে পারে
বন্ড লাইসেন্সবিহীন রপ্তানিকারকদের কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে মূল এলসির বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে বাকীতে কাঁচামাল ক্রয়ের সুবিধা অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান আইনি বাধা অপসারণ হতে পারে। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান ভ্যাট আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধন আসতে পারে।
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় এসব বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। নন বন্ড প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি অব্যাহত রাকার লক্ষ্যে গত 21 সেপ্টেম্বর এ কমিটি গঠন করা হয়, যার প্রথম সভায় অনুষ্ঠিত হয় সোমবার।
সভায় উপস্থিত নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, নন বন্ড রপ্তানিকারকের স্থানীয় কাঁচামাল ও এক্সেসরিজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যাক টু ব্যাক এলসির সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য আইনি যেসব বাধা রয়েছে, তা চিহ্নিত করে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে আমরা একটি সুপারিশ দেব। সরকারির সংস্থাগুলোরপক্ষ থেকেও একটি সুপারিশ দেওয়া হবে। এসব সুপারিশ নিয়ে আগামী এক সপ্তাহ পর ফের সভা হবে। আশা করছি, এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যমান বাধা অপসারণ হবে।
সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সোহেল বলেন, বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য আইনি যে বাধা রয়েছে, তা অপসারণ হবে। সভায় এ বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরিই স্থায়ী সমাধান আসবে।
দেশে যেসব তৈরি পোশাক ও হোম টেক্সটাইল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার মধ্যে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স নেই। তারা মূল এলসির বিপরীতে স্থানীয় উৎস থেকে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে বাকীতে শতভাগ কাঁচামাল ক্রয় করে থাকে এবং রপ্তানিকারক হিসেবে যথারীতি সরকারি ক্যাশ ইনসেনটিভসহ সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছিলো।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত সার্কুলারের সূত্র ধরে গত ৩১ আগস্ট এনবিআর বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়ে বন্ড লাইসেন্সবিহীন রপ্তানিকারকদের সব ধরণের ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা না দেওয়ার অনুরোধ জানায়।
এটি বাতিল হলে তৈরি পোশাক ও হোম টেক্সটাইল খাতের বন্ড লাইসেন্সবিহীন পাঁচ শতাধিক রপ্তানিকারকের পক্ষে বাকীতে স্থানীয় উৎস থেকে কাঁচামাল ক্রয় করা সম্ভব হবে না এবং ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। ফলে তাদের পক্ষে প্রকৃতপক্ষে
রপ্তানি বাণিজ্যে টিকে থাকা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
তারা জানান, এ ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোর রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার এবং এসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৩ লাখের উপরে। এ সুবিধা বাতিল হলে আলোচ্য পরিমাণ রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানও হুমকিতে পড়বে।
এনবিআরের পাঠানো চিঠির পর এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। গত প্রায় দুই সপ্তাহ আগে বাণিজ্য মন্ত্রৗ টিপু মুনশী ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা হয়। ওই সভায় এ ইস্যুটি সমাধানের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া এনবিআরের পাঠানো চিঠি প্রত্যাহারের অনুরোধও জানানো হয় এনবিআরকে। যদিও এখনো এনবিআর ওই চিঠি প্রত্যাহার করেনি বলে জানা গেছে।