পণ্য পরিবহন নীতিমালার প্রত্যাহার চায় সিমেন্ট শিল্প মালিকরা
লাইটার জাহাজযোগে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর সমূহে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ২০১৩- এর প্রত্যাহার চায় সিমেন্ট শিল্প মালিকরা। একই সাথে পণ্য পরিবহনে লাইটার জাহাজের ভাড়া নিয়ে ডব্লিওটিসির (ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল) একক আধিপত্য বিস্তার রোধে সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশনেরও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংগঠনের নেতারা।
এদিকে ডব্লিওটিসির সিরিয়াল অনুযায়ী, লাইটার জাহাজ চলাচল, একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ে চলমান অস্থিরতা কাটাতে ডব্লিওটিসি, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশন (বিসিএমএ), বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের (বিসিভিওএ) সাথে আগামী ১৭ অক্টোবর বৈঠকে বসছে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর। নৌ পরিবহন অধিদপ্তর শুরুতে ১৪ অক্টোবর এ বৈঠকের আহবান করলেও পরবর্তীতে ১৭ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়।
ওই বৈঠকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা প্রত্যাহার, ডব্লিওটিসির সিরিয়াল অনুযায়ী জাহাজ পরিচালনা না করা, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে বিভিন্ন নৌরুটে ভাড়া কমানো সহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরবেন শিল্প মালিকরা।
উল্লেখ্য, নৌরুটে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় ১১ অক্টোবর 'লাইটার জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী চক্রের হাতে জিম্মি আমদানিকারকরা' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শহিদুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, "আগামী ১৭ অক্টোবরের বৈঠকে আমাদের প্রধান দাবি থাকবে ২০১৩ সালের পণ্য পরিবহন নীতিমালা প্রত্যাহার করা। কারণ এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, সিমেন্ট কারখানার আমদানি করা কাঁচামালের ৫০ শতাংশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নিয়ন্ত্রণাধীন জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করতে হবে। আমরা এটি কোনভাবেই এটি মেনে নেব না। তাছাড়া নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের জারি করা নৌ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ডব্লিওটিসির সিরিয়াল নিয়ে জাহাজ পরিচালনার যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে সেটি প্রত্যাহারের দাবি জানাবো আমরা"।
মো. শহীদুল্লাহ আরো বলেন, "চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে ঢাকা অঞ্চলের (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মেঘনা, মুক্তারপুল, কাঁচপুর, আলীগঞ্জ, নিতাইগঞ্জ) রুটে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩৩ টাকা ভাড়া কমিয়ে টনপ্রতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা। আমাদের প্রস্তাব থাকবে এই ভাড়া ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা। ঢাকা অঞ্চলে ডব্লিওটিসি ১৩৩ টাকা ভাড়া কমালেও দেশের অন্য রুটে টনপ্রতি ৪১ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমিয়েছে। ভাড়া কমানোর আনুপাতিক হার যাতে ঢাকা অঞ্চলের মতো হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে"।
"ডব্লিওটিসির কারণে সাধারণ জাহাজ মালিকরা উপকৃত হয়না। যেসব ব্যক্তি এই সংস্থার সাথে জড়িত কেবল তারাই উপকৃত হচ্ছে। এই সেক্টরের স্টেকহোল্ডাররাও উপকৃত হচ্ছেনা। তাদের কার্যক্রম সরকারের কঠোর নজরদারিতে রাখা উচিত", যোগ করেন তিনি। ভাড়া নির্ধারণে সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমন্বয় এবং সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মো. শহীদুল্লাহ।
বিসিএমএ সূত্র জানায়, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ডাকা সভায় প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সকল স্টেকহোল্ডারদের কল্যাণ হয় এমন সিদ্ধান্ত নিতে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্প মালিকদের সাথে আলোচনা না করে কোন অবস্থাতেই যেন লাইটার জাহাজের ডেমারেজ চার্জ আদায় না করা হয়। বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল পৌঁছার পর ডব্লিওটিসি যেন লাইটার জাহাজ যথাসময়ে সরবরাহ করে।
নদীপথে পণ্য পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ব্যাক্তি মালিকানাধীন জাহাজ পরিচালনায় ২০০৩ সালে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিওটিসি) গঠন করা হয়। বর্তমানে ডব্লিওটিসির নিয়ন্ত্রণে ১ হাজার ৩০০টি জাহাজ এবং শিল্প গ্রুপের অধীনে প্রায় ৪০০ জাহাজ এবং অন্যান্য রুটের জাহাজ মিলে প্রায় ২ হাজার ৫০০ লাইটার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গর থেকে দেশের ৩৪টি রুটে পণ্য পরিবহন করে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ আগস্ট নৌ পরিবহন অধিধপ্তর একটি জরুরী নৌ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের অধিভুক্ত লাইটার জাহাজযোগে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ২০১৩ অনুসরণপূর্বক ডব্লিওটিসি এর সিরিয়ালভুক্ত হয়ে পণ্য বোঝাই ও খালাস করবে। এই আদেশ অমান্যকারী নৌযান, মালিক-মাস্টার এবং নাবিকদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জরুরী বিজ্ঞপ্তি জারির পর ডব্লিওটিসির সাথে সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার এবং শিল্প মালিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ডব্লিওটিসির সিরিয়াল অনুযায়ী চলতে ডব্লিওটিসির আওতার বাইরে থাকা জাহাজের নাবিকদের মারধরের ঘটনা ঘটে।