প্রতিকূল পরিবেশে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২-৩ শতাংশে নামবে: বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে খুবই উদ্বেগজনক পূর্বাভাস দিয়েছে, ওয়াশিংটনভিত্তিক দাতাগোষ্ঠী ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দেশের বার্ষিক উৎপাদন প্রবৃদ্ধির ধ্বস, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধির আশঙ্কাও করা হয় সেখানে।
লকডাউনের কারণে দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের লাখ লাখ দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ যখন তীব্র দারিদ্র্যের মুখোমুখি, ঠিক তখনই বিশ্বব্যাংক সামনে আরও দুঃসহ দিনের কথা জানালো।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রকাশ করা, বিশ্বব্যাংকের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হচ্ছে। বছরে দুই বার বিশ্বব্যাংক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে।
সেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, গতবছর দেশটির অর্থনীতি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশের উচ্চপ্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। করোনাভাইরাসের প্রভাবে মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি আগের অবস্থান হারিয়ে আগামী ৩০ জুন বা চলতি অর্থবছরের শেষদিন নাগাদ, ২ শতাংশে নেমে আসবে। এর মধ্যে অর্থনীতি সবচেয়ে ভালো করলেও প্রবৃদ্ধি কোনোমতেই ৩ শতাংশের বেশি হবে না।
আর আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষে দেশের অর্থনীতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ১ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। সবচেয়ে ভালো হলে তার অবস্থান হবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশও অর্থনৈতিক মন্দভাবের চাপে পড়তে চলেছে।
বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে ৪ দশমিক ৮ থেকে ৫ শতাংশে। পরবর্তী অর্থবছরে সেটা পরিস্থিতির ওপর নিভর করে ১ দশমিক ৫ থেকে দুই দশমিক ৮ শতাংশে পর্যন্ত বাড়তে পারে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
আর পাকিস্তান পড়তে চলেছে তীব্র মন্দার মুখে। চলতি অর্থবছর শেষে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়ে মাইনাস ২ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে এখান থেকে আংশিক উত্তরণ হওয়ার আশা থাকলেও তা দশমিক ৩ থেকে ৯ শতাংশের বেশি হবে না।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ স্কেফ্যার এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হান্স টিমার- সংস্থাটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ওয়াশিংটন থেকে সরাসরি সম্প্রচারকৃত ওই টেলি-ব্রিফিংয়ে যোগ দিতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডসহ বাংলাদেশের মাত্র দুটি গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
কোভিড-১৯ ভাইরাস মোকেবিলায় দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সকল প্রকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। এর ফলে ব্যাংকিং সহ অনান্য আর্থিকখাতের ব্যবসাকে বিপুল চাপ সামলাতে হচ্ছে। মহামারির হুমকি দূর হয়ে যাবার পরেও এটা দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক পরিবেশে সহসাই নতুন বিনিয়োগ প্রবাহের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে না।
পাকিস্তান ছাড়াও শ্রীলঙ্কাও ঋণাত্মক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সংকোচনের শিকার হতে পারে। অর্থাৎ, এই দুটি দেশেই তীব্র মন্দার শঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে পর্যটনশিল্প নির্ভর মালদ্বীপ এবং নেপালের অর্থনীতি। চলতি অর্থবছর শেষে মালদ্বীপের জন্য ঋণাত্মক ১৩ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। নেপালের ক্ষেত্রে এই পূর্বাভাস ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশ।