প্লট প্রস্তুত, উদ্যোক্তা খুঁজছে বিসিক
শিল্প-কারখানার প্লট বরাদ্দ পেতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু এখন উল্টো চিত্র। প্লট প্রস্তুত রয়েছে কিন্তু ক্রেতা নেই। তাই উদ্যোক্তাদের খুঁজতে এখন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক)।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১৪ জেলার ১৪টি শিল্পনগরীতে ৯১৩টি প্লট ফাঁকা। এর মধ্যে একটি কেবল সম্পুর্ণ নতুন আর অন্যান্য শিল্পনগরী সম্প্রসারিত।
এসব প্লট বরাদ্দ দিতে আজ মঙ্গলবার থেকে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চেয়েছে বিসিক। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে আগ্রহীদেরকে প্লটের জমির মোট মূল্যের ২০% পরিশোধ করে আবেদন করতে হবে।
বিসিক সূত্র জানায়, এর আগেও কয়েকটি শিল্পনগরীতে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়েছিল কিন্তু তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। সেই ক্ষেত্রে জমির দাম বেশি, রাস্তা ভাঙ্গা, নিরাপত্তাহীনতা ও আনুষাঙ্গিক সেবা নিশ্চিত না হওয়ায় উদ্যোক্তারা আগ্রহ দেখায়নি।
বিসিকের কর্মকর্তারা জানান, ফাঁকা থাকা প্লটের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্প এলাকা একদমই নতুন। এই প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষ। প্রথম দফায় আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হলেও কেউ-ই সাড়া দেয়নি।
এ বিষয়ে উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, এই শিল্পনগরীতে জমির যে দাম ধরা হয়েছে, তা অনেক বেশি। কাজেই জমির দাম না কমালে সেখানে শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক গত ৫ আগস্ট দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মুন্সিগঞ্জে বর্তমানে প্রতি কাঠা জমির দাম ৩-৪ লাখ টাকা। উদ্যোক্তারা যদি নিজেরা জমি কিনেও ভরাট করেন, তাহলেও সেটি বিসিকের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম হবে।"
যেসব শিল্পনগরীতে প্লট ফাঁকা
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলার বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় ৯১৩ টি প্লট খালি রয়েছে। ১৯৯৫ সালে গোপালগঞ্জ শহর সংলগ্ন এলাকায় সাড়ে ১০ একর জমির উপর পোপালগঞ্জ শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ১৩৮টি প্লট খালি আছে। ১৯৯৫ সনে মৌলভীবাজারের গোমরা এলাকায় ১৪ দশমিক ৫৯ একর জায়গা নিয়ে আরেকটি শিল্পনগরী তৈরী হয়ে। মৌলভীবাজার শিল্প এলাকায় ১২১টি প্লট খালি আছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় ৭৮টি, বরগুনায় ৬০টি, মাদারীপুরে ৪৫টি, ঝালকাঠিতে ৩৯টি, খাগড়াছড়িতে ৩৩টি, সুনামগঞ্জে ১০টি, লালমনিরহাটে ৯টি, ভোলায় ছয়টি, মেহেরপুরে ছয়টি, পটুয়াখালীতে চারটি এবং কুমিল্লায় দুটি প্লট রয়েছে।
দেশের বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল খাত স্থানান্তর হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের বিশেষায়িত শিল্পনগরীতে। এখানে ৩৬২টি প্লটের একটিও বরাদ্দ নেয় নি কোন উদ্যোক্তা।
প্লট পেলে কী কী সুবিধা
বিসিকের প্লট নিলে একজন উদ্যোক্তাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া কথা রয়েছে বিসিকের। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সম্প্রতি বিসিক-এর ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেবার উদ্বোধন করা হয়েছে। খালি প্লট বরাদ্দের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিসিক, সেখানে কিস্তিতে প্লট নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এসব প্লটের মূল্য এককালীন অথবা ৫ বছরে ১০ কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
তবে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় জমির মোট মূল্যের ২০ শতাংশ দিতে হবে।
বিসিকের বিভিন্ন শিল্পনগরীতে বরাদ্দযোগ্য খালি প্লট আগ্রহী শিল্প উদ্যোক্তাদের শিল্প স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে।
আগ্রহী শিল্প উদ্যোক্তাগণ প্লটের জন্য বিসিকের সংশ্লিষ্ট জেলা অথবা শিল্পনগরী কার্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটির মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হবে।
তবে মুন্সীগঞ্জের বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরীতে শুধুমাত্র ইলেকট্রিক পণ্য ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ইউনিটগুলো স্থাপনের জন্য প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে।
এক্ষেত্রে প্লটের জন্য আবেদনকারীকে স্ব-স্ব সমিতির মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তবে যে সকল উদ্যোক্তারা সমিতির সদস্য নন কিন্তু ইলেকট্রিক গুডস ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কারখানার মালিক তারা সরাসরি বিসিক জেলা কার্যালয়, মুন্সীগঞ্জ বরাবর আবেদন করতে পারবেন।
নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইমেন এন্টারপ্রেনারস নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ওয়েন্ড) এর প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, "বিসিক ক্ষুদ্র মাইক্রো, কটেজ উদ্যোক্তাদের সেবা দেয়ার জন্য ফোকাস করে তৈরী করা। এদের আসলে পুঁজি নেই যে টাকা দিয়ে এককালীন জমি কিনতে পারবে। তাই তাদের কিস্তিতে কিনতে হয়। কিস্তিতে কিনলে তাকে লোকাল অফিসে গিয়ে কিনতে হয়, ঢাকা অফিস থেকে কিনলে একালীন সব টাকা দিতে হয় এটা একটা জটিলতা।"
তিনি বলেন, "ল্যান্ডের উপর ব্যাংক কোন লোন দেয় না। মেশিনারি কেনা হলে সেটার উপর লোন দেয়। এর ফলে ছোট উদ্যোক্তারা অর্থ সংকটে কিনতে পারছে না। তাই তারা যেন সহজ শর্তে ঋণ সুবিধায় কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। খাগড়াছড়িতে বিসিক শিল্প এলকার এক একর জমি ৫০ লাখ টাকা, আর নরসিংদিতে এক একর জমি ১০ কোটি টাকা দাম চেয়েছে।"
বিসিক বেসরকারি খাতে ক্ষুদ্র কুটির ও গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে।
বর্তমানে সারা দেশে বিসিকের ৭৬টি শিল্পনগরী রয়েছে।
২০৪১ সালের মধ্যে অর্থৈনতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ৪০ হাজার একর জমিতে ১০০ টি পরিবেশবান্ধব শিল্পপার্ক স্থাপনের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিসিক।
বিসিক বলছে, দেশের বড় বড় অনুকরণযোগ্য শিল্প বিসিকে রয়েছে। যার মধ্যে স্কয়ার, প্রাণ-আরএফএল, বিআরবি ক্যাবলস, হ্যামকো, ন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ফরচুন সুজ, আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্লোব ইন্ডাস্ট্রিজ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া নিট ও তৈরি পোশাক শিল্পের প্রচুর কারখানা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার বিসিকে রয়েছে। পোলট্রি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের কারখানাগুলোও এখন বিসিকে হয়েছে। জামদানি ও হোসিয়ারি শিল্প ছাড়াও চামড়া, এপিআই, হালকা প্রকৌশল ও বৈদ্যুতিক পণ্য, প্লাস্টিক, মুদ্রণ, কেমিক্যাল শিল্প রয়েছে বিসিকের শিল্পনগরীগুলোতে