বাজেট ২০২১-২২: স্বাস্থ্য গবেষণায় বরাদ্দ থাকছে ১০০ কোটি টাকা
করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন ভাইরাস ছাড়াও স্বাস্থ্য সেবা এবং মেডিকেল শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, কিন্তু এই তহবিল পরিচালনায় গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটি ও এ্যাওয়ার্ড কমিটির সদস্য কারা হবেন, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরোধ দেখা দেওয়ায় এতদিন গবেষণার কোনকিছুই শুরু হয়নি, কোন টাকাও খরচ হয়নি।
তারা বলছেন, দেরিতে হলেও তহবিল পরিচালনায় দু'টি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এই তহবিলের আওতায় গবেষণা প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। তাই আগামী অর্থবছর থেকে স্বাস্থ্য সেবা গবেষণা বাড়তি গতি পাবে এবং দেশ এর সুফল পেতে শুরু করবে। এ প্রত্যাশা থেকেই নতুন অর্থবছরেও এ তহবিলে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
গত বছর জুন মাসে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন বাবদ ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এই তহবিল পরিচালনার জন্য 'সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কিত নীতিমালা' তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করে গত নভেম্বরে। তাতে যাচাই-বাছাই কমিটি ও এ্যাওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের নামও চূড়ান্ত করে অর্থবিভাগ।
তহবিল পরিচালনায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স এন্ড হসপিটালের পরিচালক ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদকে প্রধান করে ১১ সদস্যের এ্যাওয়ার্ড কমিটি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমানকে সভাপতি করে সাত সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন করার পর ৯ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে তার প্রজ্ঞাপন জারি করতে বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত নীতিমালাটি হাতে পাওয়ার পর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ দুই কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দমত নতুন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে গত মার্চে নীতিমালা জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
কমিটি থেকে বিশেষজ্ঞদের বাদ দিয়ে পছন্দের ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে নীতিমালা জারির ঘটনায় আপত্তি করে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়ে দেয়, কমিটি দু'টিতে যেসব বিশেষজ্ঞদের নাম রয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত। তাই সেখান থেকে কাউকে বাদ দেওয়া বা নতুন করে কমিটিতে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
এ প্রেক্ষিতে গত ২৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে আলোচনা করলে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত কমিটিতে কোন ধরণের পরিবর্তন করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন অর্থসচিব। ওই দিনই নতুন করে সংযোজিত ব্যক্তিদের নাম বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি পুনঃবহাল করে সংশোধিত নীতিমালা জারি করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।
এ্যাওয়ার্ড কমিটির সদস্য অধ্যাপক ও ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা প্রধান মো. রিদোয়ানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ২৩ জুনের মধ্যে আগ্রহী গবেষকদের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করতে আরও এক মাস সময় লাগবে।
বাছাই কমিটির সুপারিশ করা গবেষণা প্রস্তাবগুলো এ্যাওয়ার্ড কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর তিন কিস্তিতে গবেষকদের অনুদান দেওয়া হবে। গবেষকরা ২ বছরের মধ্যে গবেষণাপত্র জমা দেবে, জানান তিনি।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যখাতের দীর্ঘদিনের অর্জনগুলো টেকসই করা এবং ভবিষ্যতে মহামারি বা মরণব্যাধির প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ ও মোকাবেলাসহ সামগ্রিকভাবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা প্রনয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
'উন্নত বিশ্বের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আত্মীকরণের পাশাপাশি নিজস্ব গবেষণাভিত্তিক জনস্বাস্থ্য-চিকিৎসা শিক্ষা-চিকিৎসা সেবার মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি উন্নততর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি', বলা হয়েছে এতে।