বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ৮ গুণ বেশি ঋণ চায় এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা
করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণের চাহিদা বেড়েছে।
আর্থিক অবস্থার উত্তরণে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সরকার ঘোষিত স্বল্প সুদে প্রণোদনার ঋণ পেতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঋণ চেয়েছে অন্তত আটগুণ বেশি।
এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কয়েক হাজার উদ্যোক্তার বেশি চাহিদা পেয়ে ঋণ বিতরণে হিমশিম অবস্থার মধ্যে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা এসএমই ফাউন্ডেশন।
সারাদেশের বিভিন্ন খাতের ৬০-৭০টি এসোসিয়েশনের কাছ থেকে উন্মুক্ত চাহিদা চাওয়ার পর ঋণের এই আবেদন পেয়েছে ফাউন্ডেশন।
নিজস্ব বিতরণ ব্যবস্থা না থাকায় ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ঋণ বিতরণ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
তবে এই ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক-তৃতীয়াংশ ঋণ অনুমোদন সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ১৬৬ জন উদ্যোক্তা ১৫.৬৬ কোটি টাকা ঋণ হাতে পেয়েছে।
আর ১৮১ জন উদ্যোক্তার জন্য ১৯.৪৯ কোটি টাকা অনুমোদন পেলেও বিতরণ সম্পন্ন হয়নি। চলতি মাসের মধ্যেই আরও ৩৫১ জন উদ্যোক্তা ৬২.০৬ কোটি টাকা ঋণ হাতে পাবে।
ঋণ বিতরণের আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে এক আলোচনায় ঋণ পেতে জামানত সংক্রান্ত জটিলতার শঙ্কার কথা জানিয়েছিল উদ্যোক্তারা।
তবে এই প্যাকেজের ঋণ পেতে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) এর সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন।
তিনি বলেন, "আগের প্যাকেজে যেসব জটিলতা ছিল, এবার তেমন নেই। উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পাচ্ছে। করোনাকালে সরকারের এই প্রণোদনা প্যাকেজটিই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বড় সহায়ক হবে।"
গত বছর কোভিড-১৯ মহামারির পরে সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। তবে অভিযোগ উঠেছে যে ব্যাংকিং চ্যানেলের জটিল বিতরণ প্রক্রিয়ার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এ ঋণ পান নি।
পরবর্তী সময়ে, সরকার পেরিফেরাল পর্যায়ে ঋণ বিতরণে বেসরকারী সংস্থাগুলোকে নিযুক্ত করার উদ্যোগ নেয়। এই বছরের ১৭ জানুয়ারী, সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও কৃষকদের জন্য ১,৫০০ কোটি টাকার নতুন প্যাকেজ অনুমোদন করে।
এই প্রণোদনা প্যাকেজের তিনশ কোটি টাকা বিতরণের অনুমোদন পায় এসএমই ফাউন্ডেশন, যার মধ্যে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা আর আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাকি ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করবে।
এছাড়াও এই প্যাকেজ বাস্তবায়নে সামাজিক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিএসসিআইসি), ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ), জয়িতা ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনকে যুক্ত করা হয়।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, "করোনায় ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, তাদের ঋণের চাহিদা অনেক বেশি।"
"সারাদেশের বিভিন্ন খাতের ৬০-৭০টি এসোসিয়েশনের পক্ষ যে চাহিদা পেয়েছি, তা বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।"
ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্রাধিকারভুক্ত এসএমই উপ-খাত, সম্ভাবনাময় এসএমই ক্লাস্টার, নারী ও নতুন উদ্যোক্তা এবং পশ্চাদপদ অঞ্চল, উপজাতীয় অঞ্চল, শারিরীকভাবে অক্ষম ও তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তাগণ ৪% সুদে ঋণ নিতে পারবে। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪টি সমান মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
প্রথম দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পাওয়া পল্লী ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাগণ এই ঋণ নিতে পারবে, যাতে মোট ঋণের ২৫-৩০% নারী-উদ্যোক্তারা পাবে।
ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি ৮০ কোটি টাকার ঋণের চাহিদা এসেছে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রিক্যাল খাত থেকে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ২৫-৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও চাহিদা এসেছে ৬০ কোটি টাকা। এছাড়াও নতুন উদ্যোক্তা ও ব্যাংক থেকে একবারও ঋণ নেয়নি এমন উদ্যোক্তারাও চাহিদা পাঠিয়েছে।
গত মে পর্যন্ত ঋণ বিতরণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টি ব্যাংক কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। পাঁচটি ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ১৬৬ জন উদ্যোক্তাকে ১৫.৬৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। এই ব্যাংকটি ১২৪ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ১৩.০৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।
আরও ২৯ জন উদ্যোক্তার জন্য ২.৫৩ কোটি ঋণ অনুমোদন করলেও বিতরণ করতে পারেনি।
নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, "যেসব উদ্যোক্তা একদম প্রান্তিক ও কখনো ব্যাংকের সাথে লেনদেন করেনি কিন্তু মহামারিকালে ঋণ প্রয়োজন, এমন উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আগের প্রণোদনা প্যাকেজে শুধু বড়রাই পেয়েছে, কিন্তু এবার ছোট ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে।"