বিনিয়োগ বাড়াতে কর কমানোর প্রস্তাব বিডা, বেজা, বেপজার
দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে বেশি করপোরেট করহার, লোকসানি হলেও ন্যূনতম করসহ কর কাঠামোর জটিলতাকে বাধা মনে করছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষসহ (বেজা) সরকারের বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষগুলো।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটকে মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনঃরুদ্ধারের বাজেট উল্লেখ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে বিনিয়োগকারীদের জন্য আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
বুধবার এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় বিডা ও বেজার পাশাপাশি বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তপক্ষ ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট অংশ নেয়।
বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে করপোরেট করহার কমানোর কথা উল্লেখ করে বিডার বিডার নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশে করপোরেট করের হার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। যে কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়েও বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রতি আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্পোরেট করের হার কমানো হলে বিনিয়োগ বাড়বে।
করছাড়ের কারণে রাজস্ব যেন না কমে সেকারণে একটি গবেষণা দল গঠনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, "এনবিআরের সহায়তায় আমরা একটি রিসার্চ টিম গঠন করতে চাই। কোনো খাতে করহার ছাড় দেওয়া বিষয়ক জরুরি টিম সে বিষয়ে কাজ করবে। আবার কোনো ছাড় না দিলেও বিনিয়োগ পাওয়া যাবে তার তালিকা করবে এ টিম।"
শুধু কর ছাড়ের চিন্তা না করে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায়ে সহায়ক এমন প্রস্তাব দেওয়ায় কমিটি গঠনের প্রস্তাব সমর্থন করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমতুল মুনিমও।
বাংলাদেশে করপোরেট করহার বেশি উল্লেখ করে বিডার পরিচালক মো. আরিফুল হক বলেন, "বর্তমানে সাধারণ কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩২.৫ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংককে সাড়ে ৩৭ শতাংশ; সিগারেট, জর্দা ও বিড়ি উৎপাদকদের ৪৫ শতাংশ কর দিতে হয়। মোবাইল ফোন কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। অন্যদিকে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডে ২০ শতাংশ।"
প্রতিযোগী দেশের তুলনায় করহার বেশি হওয়ায় বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে উল্লেখ করে তা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার প্রস্তাব দেন তিনি।
প্রতিবছর ২ শতাংশ হারে করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাবের পাশাপাশি কোম্পানির জন্য ন্যূনতম কর প্রদানের আইন বাতিলের প্রস্তাব করে বেপজা।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আজিজ বলেন, "কোনো কোম্পানি লোকসান করলেও তাকে ন্যূনতম কর দিতে হয়। এতে লোকসানি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় টিকে থাকা কষ্ট হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় এটি প্রত্যাহার করা উচিৎ।"
অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য ও সেবার ওপর কর অবকাশ সুবিধা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম ভ্যাট ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয় বেজা।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি ঢাকার বাহিরে অনুন্নত এলাকায় শিল্প স্থাপনে কর অবকাশ সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এর সদস্য মাহমুদুল হাসান তাদের প্রস্তাব জমা দেন।
হাইটেক পার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, "হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে অনেক বিদেশি কোম্পানি আসছে। ভিয়েতনাম, চীন জায়গা নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু কর সংক্রান্ত কিছু সুবিধা না পাওয়ার সংশয় থাকায় তারা শেষ মূহুর্তে ফিরে যাচ্ছে। তারা বলছে, কর সংক্রান্ত এসব সুযোগ পাব কিনা, আমাদের সেই নিশ্চয়তা দিলে চুক্তি স্বাক্ষর করব।"
হাইটেক অথরিটির পক্ষ থেকে এনবিআরের দেওয়া বেশ কয়েকটি এসআরও সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়।
কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বেশ কিছু কার্যকরী সুপারিশ তুলে ধরেছে বিল্ড। কর আহরণ প্রক্রিয়াকে সহজতর করে করের আওতা বাড়ানো, করপোরেট কর কমানো, চাহিদা ও যোগানের পার্থক্য কমিয়ে আনার সুপারিশ করেন বিল্ড চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান।
এছাড়া অর্থনীতি ও বেসরকারি খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের জন্য আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টম শুল্ক সংক্রান্ত বেশকিছু বিষয় পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে বিল্ড।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: কমপ্লায়েন্স ও প্রশাসনিক ব্যয় কমিয়ে আনা, প্রক্রিয়াগত সততা নিশ্চিতকরণ এবং অসামঞ্জস্য ও বৈষম্য পরিহার, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং করদাতা, নাগরিক ও গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা স্থাপন, তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো এবং ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সুবিধা চালুকরণ, করদাতাকে কাস্টমার হিসেবে বিবেচনা এবং কমপ্লায়েন্স সহজীকরণ, ট্যাক্স অডিট স্ট্রাটেজি গ্রহণ ও সবার জন্য উত্তম সেবা চালুকরণ।
এনবিআর অটোমেশনে যাচ্ছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অটোমেশনের কারণে করফাঁকি কমে গেলে তখন এনবিআর ছাড় দিতে পারবে। এজন্য ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান তিনি।