ব্যাংকে আমানত রেখে লোকসানে গ্রাহকরা
ব্যাংকে আমানত রেখে এখন লাভের আশা করা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে প্রকৃত সুদহার হিসাব করলে ব্যাংকে টাকা রেখে উল্টো লোকসান গুনছেন গ্রাহকরা।
গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালের 'মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন' বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে আমানতের গড় সুদহার কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৭৯ শতাংশ। একই মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫.৯৭ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে আমানতের প্রকৃত সুদহার দাঁড়ায় ঋণত্মাক (-) ১.১৮ শতাংশ। অর্থাৎ কোন গ্রাহক ব্যাংকে নির্দিষ্ট মেয়াদে ১০০ টাকা জমা রাখলে মূল্যস্ফীতির হিসাবসহ তার পরিমাণ দাঁড়াবে ৯৮.৮২ টাকা।
আমানতের সুদহার কমায় সঞ্চয়কারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অবসরে থাকা ব্যক্তিরা।
তিনি নিজেও এর ভুক্তভোগী উল্লেখ করে বলেন, ব্যাংকিং পেশা থেকে অবসরের পর যে সঞ্চয় ব্যাংকে রেখেছিলেন, আমানতের সুদহার কমায় ওই সঞ্চয় থেকে মাসে তার আয় কমে গেছে।
ঋণের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তকে সঠিক উল্লেখ করে আমানতকারীদের জন্য বিকল্প সঞ্চয় পদ্ধতি বের করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) তুলনায় ঋণের সুদহারের চেয়ে আমানতের সুদহার বেশি হ্রাস পেয়েছে।
এতে ঋণ-আমানত সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড বেড়েছে। চলতি বছরের জুন মাস শেষে গড় ব্যবধান ছিল ২.৮৯। সেপ্টেম্বর শেষে এই গড় সামান্য বেড়ে ৩ শতাংশ হয়েছে। ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়া হলেও কোভিডের প্রভাবে চাহিদা কম থাকায় সেপ্টেম্বর শেষে গড় সুদহার ছিল ৭.৭৯ শতাংশ।
আমানতের সুদহার হ্রাস পেলেও চলতি বছরের গত জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বর শেষে ডিমান্ড ও টাইম ডিপোজিট বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি।
এপ্রসঙ্গে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বড় বড় কয়েকটি ব্যাংক এখনো ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামায়নি। তারা উচ্চ সুদে আমানত নিচ্ছে। ওসব ব্যাংকেই আমানতের টাকা যাচ্ছে বলে আমানত বাড়ছে বলে তার অভিমত। এতে এক দেশে দুই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।'
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এবিবির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রেমিটেন্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং ভালো বিকল্প না থাকায় টাকার নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকৃত সুদহার ঋণাত্মক হলেও গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা রাখছেন।
ঋণের গড় সুদহার কমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গড় হিসাব কখনো প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করে না। অনেক ব্যাংকের সুদহার ৯ শতাংশের নীচে আছে, আবার অনেকের এর থেকে বেশিও আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যদিকে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১১.৫ শতাংশের বিপরীতে সেপ্টেম্বর শেষে অর্জন ছিল ৯.৪৮ শতাংশ।