ভূমি নিবন্ধনে রাজস্ব ফাঁকি: এখনও ওপেন সিক্রেট
রাজধানীর বনানী আবাসিক এলাকার ৭ নম্বর সড়কের মাঝামাঝি পূর্বপাশে একতলা বাড়ি সহ ৪৩ নম্বর প্লটটি সাম্প্রতিক বিক্রয় করেছেন এর মালিক ইমরোজ হাসান। এই জমির ক্রেতা সামিউল হক রাসেল। গুলশান অঞ্চল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গত এপ্রিল মাসে জমিটির সাফ-কবলা দলিল নিবন্ধন হয়েছে।
ওই অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি কাঠা জমি মাত্র ১০ লাখ টাকা করে এবং জমিটির ওপর ৩৮০০ স্কোয়ার ফিটের একটি একতলা বাড়ির দাম ধরা হয়েছে মাত্র ১৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট মূল্য দাঁড়ায় মাত্র ৭৫ লাখ টাকা।
কিন্তু গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই এলাকায় সরকারের নির্ধারিত জমির সর্বনিম্ন মূল্য ৫০ লাখ টাকা কাঠা। আর আবাসিক ভবনের মূল্য প্রতি স্কয়ার ফিট সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা। সে হিসেবে প্লটটির সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৩ কোটি টাকা আর বাড়ির সর্বনিম্ন মূল্য ৫৭ লাখ টাকা।
সরকারের বেধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী সিটি করপোরেশন অধিভুক্ত ও রাজউকের আওতায় এরকম জমি বা বাড়ি বিক্রয়ের দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে মোট মূল্যের ওপর রেজিস্ট্রেশন ফি ১ শতাংশ, স্ট্যাম্প শুল্ক ১.৫ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ২ শতাংশ, উৎসে আয়কর ৪ শতাংশ, হলফনামা ২০০ টাকা, ই-ফিস ১০০ টাকা, এন ফিস ১৬০ টাকা, এনএন ফিস ২৪০ টাকা এবং কোর্ট ফি ১০ টাকা রাজস্ব খাতে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
সরকার প্রণীত ক্যালকুলেটরে হিসেব করে দেখা যায়, বানানীর ওই প্লট-বাড়ির রাজস্ব জমা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৬১০ টাকা। আর যদি সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য সরকার নির্ধারিত জমির সর্বনিম্ন দাম হিসেব করে রাজস্ব জমা দিত, সেটির পরিমান দাঁড়াত প্রায় ২৮ লাখ টাকা।
জমির ক্রেতা সামিউল হক রাসেল বলেন, 'সরকার নির্ধারিত রাজস্ব মাত্রারিক্ত যা একজন ক্রেতার পক্ষে পরিশোধ করা অযৌক্তিক। দলিল লেখকের পরামর্শ নিয়েই দলিলটির নিবন্ধন করেছি। আর সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্য নিয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই প্লট বিক্রয়ের মধ্যস্থতাকারী কয়েকজন ব্যক্তির একজন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, বাড়িসহ ওই প্লটটি মূলত ৯ কোটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজস্ব ফাঁকির চিত্র
এরকম রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা শুধু বনানীর ওই প্লট ও বাড়ি বিক্রিতেই ঘটেনি। ঢাকা মহানগর এলাকায় ১৬ টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ সাফ-কবলা দলিল নিবন্ধিত হয়েছে। এলাকাগুলো হলো কোতোয়ালি, সুত্রাপুর, মিরপুর, গুলশান, পল্টন, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, ডেমরা, বাড্ডা, তেঁজগাও, পল্লবী, দারুস সালাম, খিলগাঁও, শ্যামপুর, ধানমন্ডি ও উত্তরা। এই তিন লাখ দলিল নিবন্ধন থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
রাজউক নিয়ন্ত্রিত আবাসিক এলাকার মধ্যে গুলশান, বনানী, বারিধারা আবাসিক এলাকার প্রতি কাঠা জমির সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্য হলো ৫০ লাখ টাকা। এছাড়াও মতিঝিল, সুত্রাপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর এলাকার জন্যও সর্বনিম্ন এই একই দাম।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অনুসন্ধানে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরের জুন পর্যন্ত গুলশান, বনানী ও বারিধারা এই তিন আবাসিক এলাকায় বাড়িসহ প্লট বিক্রয়ের পর ৮ হাজার ৪০০ টি সাফ-কবলা দলিল নিবন্ধন হয়েছে। যেখানে রাজস্ব উঠেছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাত্র ২৩৪ টি দলিল নিবন্ধন হয়েছে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বাজার দরে। আর বাকি দলিলগুলোরে কোনোটিতেই আসল মূল্য উল্লেখ করা দূরের কথা, সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্য উল্লেখও করা হয়নি।
ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের সূত্রটি জানিয়েছে, এই তিন এলাকায় সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্য হিসেব করে দলিল নিবন্ধন করলে সরকার আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেত এই বছরের ছয় মাসে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান টিবিএসকে জানান, জমি, বাড়ি বা ফ্লাটের আসল মূল্য ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ প্রকাশ করেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বাজার মূল্যও দলিলে উল্লেখ করা হয় না।
"এতে করে সরকার প্রতি বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। রাজস্ব ফাঁকির সঠিক পরিসংখ্যন না থাকলেও নিবন্ধন খাত থেকে যে পরিমান রাজস্ব আদায় হয়, সঠিকভাবে রাজস্ব আদায় হলে এর তিনগুণ রাজস্ব আদায় সম্ভব," বলেন তিনি।
নিবন্ধন অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের জমি, প্লট ও ফ্লাট নিবন্ধন থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে নিবন্ধন বিভাগ থেকে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, ২০১৯ সালে ১২ হাজার কোটি টাকা।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "মূলত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্যই এরকম কারচুপি করা হয়। এইটা শুধু রাজধানী বা অন্য শহরে নয়, দেশের প্রতিটি এলাকায় এরকম দলিল নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে জমি বিক্রয়ের মূল মূল্য গোপন করে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্যের চেয়েও কম দাম দেখিয়ে দলিল নিবন্ধন করা হয়। এই খাতে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে, বড় এক ওপেন সিক্রেট এটি। যেটি নিয়ন্ত্রণে কোনো নজরদারি নেই।"
উত্তরা অঞ্চল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, উত্তরা আবাসিক এলাকার ১ থেকে ৯ নাম্বার সেক্টরে প্রতি কাঠার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা ১৫ লাখ টাকা, ১০ থেকে ১৪ নাম্বার সেক্টরে ১০ লাখ টাকা। নিকুঞ্জ উত্তর ও দক্ষিণের প্রতি কাঠার দাম ১০ লাখ টাকা। এই এলাকায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয়ের পর ১৭,২০৮ টি সাফ-কবলা দলিল নিবন্ধিত হয়েছে।
উত্তরা অঞ্চল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই ছয় মাসে মাত্র ৩ হাজার ৬০০টি দলিলে এই এলাকার জন্য সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্য উল্লেখ করে দলিল নিবন্ধন হয়েছে।
মতিঝিল অঞ্চল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শুধু মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় প্লট ও ফ্লাট বিক্রির ৮১৪ কবলা দলিল নিবন্ধন হয়েছে। এই দলিলগুলো থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
সরকার নির্ধারিত এই এলাকার বাণিজ্যিক প্লট প্রতি কাঠার সর্বনিম্ন মূল্য ৮০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা। ৮১৪ কবলা দলিলের একটিতেও সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দাম উল্লেখ করা হয়নি।
রাজস্ব ফাঁকি নিরপনের ব্যবস্থা নেই
ভূমি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ মকবুল হোসেন এমপি টিবিএসকে বলেন, ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এরকম রাজস্ব ফাকির বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, রেজিস্ট্রেশন বিভাগ আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আর ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য সকল বিভাগ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। ফলে ভূমি মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কিছু করতে পারছে না।
তিনি বলেন, "গত বছর প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে রেজিস্ট্রেশন খাত থেকে। এই খাতে কী পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটছে তার সঠিক পরিসংখ্যন নিরুপন করা যায়নি। নিরুপনের কোনো ব্যবস্থাও নেই,"
"নিবন্ধন ব্যবস্থা ডিজিটাইজড করা গেলে অন্তত এলাকা ভিত্তিক সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দাম হিসেবে রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে," যোগ করেন তিনি।
এর কারণ জমির সকল কাগজপত্র অনলাইনে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"একজন সাব-রেজিস্ট্রার যখন দলিলের নিবন্ধন চূড়ান্ত করবেন, তখন এক ক্লিকে সব কাগজপত্র তার সামনের মনিটরে হাজির হবে। সেখানে কোনো দালল চক্র বা প্রভাবশালী কেই প্রভাব খাটিয়ে রাজস্ব ফাকি দিতে পারবে না। এই অনলাইন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অটোমেটিকভাবে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিংয়ে থাকবে," বলেন তিনি।
কীভাবে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়?
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, "আইন মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিবন্ধন অধিদপ্তরের অধীনে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। এই অফিসগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অসততা, দালালদের দৌরাত্ত আর দলির লিখার কাজে নিয়োজিত মহরারা রাজস্ব ফাকির পেছনে মূল দায়ী।"
তিনি বলেন, "একজন সাব-রেজিস্ট্রার জেনে বুঝেও আইন লংঘন করে দলিল নিবন্ধন করে দিচ্ছেন প্রকৃত মূল্য বা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও কম দাম দেখিয়ে। এখানেই মূল রহস্যটা। তাদেরকে জাবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্টরা সব কিছু জেনে বুঝে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি আলোচনায় আসছে না।"
আরেক ধরনের চাতুরি
রাজধানী ভাটারা থানার আওতায় মাদানী এভিনিউ এলাকায় ১১ কাঠার জমি বাড়িসহ সাম্প্রতিক বিক্রয় করেন মালিক আহসান হাবীব। জমিটি মূলত সাড়ে ৬ কোটি টাকায় বিক্রি করলেও সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়ে যানা যায়, জমিটি বিক্রয় করা হয়েছে 'পতিত' শেণির জমি দেখিয়ে। এই এলাকায় সরকার নির্ধারিত বসত জমির সর্বনিম্ন দাম ১৫ লাখ টাকা কাঠা। কিন্তু দলিল করার আগে চতুর ক্রেতা ভূমি অফিসের দায়িত্বরতদের ম্যানেজ করে জমিটির খতিয়ানে শ্রেণি 'বসত বাড়ি' থেকে পরিবর্তন করে 'পতিত' জমি হিসেবে দেখিয়ে মাত্র ১১ লাখ টাকা উল্লেখ করে দলির নিবন্ধন করান।
ঢাকার একটি অঞ্চলের একজন সাব-রেজিস্ট্রার বলেন, "শুধু সাব-রেজিস্টারদের দোষ দিলেই হবে না। এখানে অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতারা বিক্রেতার সঙ্গে সমঝোতা করে এভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেও রাজস্ব ফাকি দিচ্ছে।"
ভাটারা ভূমি অফিসে সরেজমিন খবর নিয়ে জানা যায়, জমিটির সর্বশেষ খতিয়ান অনুযায়ী 'বসত' ভিটা রয়েছে। কিন্তু গত বছর নভেম্বর ওই জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়।
নিবন্ধন অধিদপ্তরের সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল আব্দুল মান্নান বলেন, "জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেও অনেকসময় রাজস্ব ফাকি দেওয়া হচ্ছে। দেখা যায়, শিল্প অঞ্চলের জমি আবাসিক জমি হিসেবে, বাণিজ্য অঞ্চলের জমি পতিত হিসেবে, ভিটি জমি নালা হিসেবে, নালা-জেলা শ্রেণির জমি পরিত্যক্ত হিসেবে ক্রয় দেখিয়ে কম দাম উল্লেখ করে দলিল নিবন্ধন করা হচ্ছে।"
আর জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার দায়িত্বে রয়েছে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসগুলো। তাদেরকেও যথাযথ মনিটরিংর এর আওতায় আনা দরকার বলে উল্লেখ করেন আব্দুল মান্নান।
যখন কেনা দামের চেয়ে বেশি মূল্য দেখানো হয়
রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুল মৌজার ১৪৭ নম্বর দাগে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৮ কাঠা 'ভিটি' জমি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিক্রয় করেন স্থানীয় বাসিন্দা মোখলেসুর রজমান বাদল। ওই জমিটি ক্রয় করেন ওই এলাকার কাঠের ফার্নিচার ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান।
এই মৌজার জন্য সরকার নির্ধারিত 'ভিটি' জমির সর্বনিম্ন দাম মাত্র সাড়ে ৪ হাজার টাকা প্রতি কাঠা। বাড্ডা অঞ্চল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায় জমিটির দলিলে মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানের সময়, জমিটির পাশের মুদি দোকানী আমিনুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, ওই ৮ কাঠা জমির সাথে একই দাগে মোখলেসুর রজমান বাদলের ভাই মবিনুর রহমানেরও ৮ কাঠা জমি আছে।
মোখলেসুর রহমান বাদলের জমিটি মবিনুর রহমান কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক কলহ থাকায় মোখলেসুর তার ভাইয়ের কাছে জমিটি বিক্রয় করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
জমিটির ক্রেতা ফার্নিচার ব্যবসায়ী লুৎফর রহমানের বন্ধু ইমরান হোসেন টিবিএসকে বলেন, "জমিটি আসলে কিনেছে ৭০ লাখ টাকায়। কিন্তু আইন অনুযায়ী মোখলেসুর রহমানের ভাই ওই জমিটি কিনতে অগ্রাধিকার পাবে।"
প্রিয়েমশন আনুযায়ী ওই জমিটি কেনার জন্য মবিনুর রহমান যাতে মামলা করে কোনো লাভ করতে না পারেন, সেজন্যই কেনা দামের চেয়েও জমিটির দলিলে দ্বিগুণ দাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেজন্য রাজস্বও বেশি দিতে হয়েছে। কারণ লুৎফর রহমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণের জন্য জায়গাটি খুব দরকার।
যেভাবে ঠেকানো যাবে এই ফাঁকি
ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষক সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন জানান, জার্মানি, আয়াল্যান্ড, মেক্সিকো, সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক দেশে কেউ জমি, ফ্লাট বা বাড়ি বিক্রি করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, মিউনিসিপিলিটি বা ভূমি নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছে নোটিশ করতে হয়। এরপর এসব অফিস সেই ভূমি বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে।
"কেউ কিনতে চাইলে ক্রেতাদের মধ্যে থেকে সর্ব্বোচ্চ দাম নির্ধারণ হলে বিক্রেতার উপস্থিতিতে জমির দলির রেজিস্ট্রেশন হয়। আবার কোনো বিক্রেতা-ক্রেতা মিউচুয়াল করে নোটিশ দিলে, তারা সব কিছু যাচাই-বাছাই করে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করে। ফলে এসব দেশে রাজস্ব ফাাঁকির কোনো প্রশ্ন ওঠে না।"
বাংলাদেশেও এরকম নিয়ম চালু করা গেলে রাজস্ব ফাকির লাগাম টানা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাজস্ব ফাকির বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক টিবিএসকে বলেন, "নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার পদ্ধতি ডিজিটাইজড করার প্রক্রিয়া চলমান। এ নিয়ে কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ হলেই কাজ শীগগরই হাজ শুরু হবে। অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হলেই রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টির সুরাহা সম্ভব।