রপ্তানিতে লিড টাইম কমাতে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ফ্যাক্টরের সহজীকরণ চায় বিজিএমইএ
বিশ্বের অন্যদেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে পোষাক রপ্তানিতে লিড টাইম কমিয়ে আনতে হবে। সেজন্য ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের ফ্যাক্টর সমূহের সহজীকরণ প্রয়োজন।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম বিজিএমই'র আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
মত বিনিময়কালে পোষাক শিল্পের সংকট তুলে ধরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, "চট্টগ্রামে ৬৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্ধ হয়েছে ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠান। বাকি ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১৯০টি প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চ থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩টি পোষাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে"।
গত এক দশক পূর্বে পোষাক শিল্পের রপ্তানিতে চট্টগ্রামের অংশগ্রহণ ছিল ৪০ শতাংশ। বর্তমানে চট্টগ্রামে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট সহ অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামে ব্যাংক সমূহের প্রধান কার্যালয় না থাকার কারণে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে পোষাক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ঋণ প্রদান সহ আমদানি ঋণপত্র খোলার জন্য লিমিট বৃদ্ধিকরণ সংক্রান্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম থেকে দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না।
এছাড়া কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃক ভ্যাট আদায়ে কার্যক্রম সহজীকরণ, কাস্টম বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সহজীকরণ, কাস্টম হাউস চট্টগ্রামের মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্য চালান দ্রুত খালাস, আমদানিকৃত পণ্য একই দিনে ডেলিভারি প্রদান করা প্রয়োজন।
পোষাক শিল্প খাতের উন্নয়নে ৯ ধরনের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় মতবিনিময় সভায়। এসব প্রস্তাবনায় রয়েছে গার্মেন্টস, পল্লী বা শিল্প এলাকা স্থাপন, ব্যাংকের বিনিয়োগবান্ধব উদ্যোগী ভূমিকা, সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে ক্ষমতায়ন করা, পোশাক শিল্পের প্রণোদনা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়কে ক্ষমতায়ন করা, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিপূর্বক আন্তর্জাতিকীকরণ এবং বিমানের আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি করা, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এছাড়াও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেম, পিডিবিসহ ইউটিলিটি দপ্তরসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনপূর্বক নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগসুবিধা নিশ্চিতকরণ।
বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সেবাকে "অত্যাবশ্যকীয় সেবা / জরুরী সেবা" হিসাবে অর্ন্তভুক্ত করা। বন্দর কাস্টমস, পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক ধর্মঘটের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত করার অপচেষ্টা বন্ধ করা প্রয়োজন। মিরসরাই এবং আনোয়ারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মত দেশীয় উদ্যোক্তাদেরকেও সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাতে সময় লাগে প্রায় ৪০ দিন। অথচ চীনের সময় লাগে ১৫ দিন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে লিড টাইম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে এগোতে হলে অটোমেশনের কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ফ্যাক্টর সমূহ সহজীকরণ করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় রপ্তানিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্য দেশের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হলে ফ্যাশন এবং কোয়ালিটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সকল কার্যক্রমে অটোমেশন এবং আধুনিক মেশিন সংযোজন করার কোন বিকল্প নেই।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিজিএমইএ'র পরিচালক ও বিজিএমইএ'র প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম, পরিচালক এমডি. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী, প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, এস.এম.আবু তৈয়ব, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, মঈনউদ্দিন আহমেদ (মিন্টু)।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক চট্টগ্রামের ব্যুরো চীফ সালাউদ্দিন রেজা, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আই এর চট্টগ্রাম ব্যুরো চীফ চৌধুরী ফরিদ, বাংলাভিশন চট্টগ্রামের ব্যুরো চীফ নাসির উদ্দিন (তোতা), ডিবিসি নিউজ চট্টগ্রামের ব্যুরো চীফ মাসুদুল হক প্রমুখ।