রাজশাহী সুগার মিল: চিনি বিক্রি না হওয়ায় ৩ মাস ধরে বেতন বন্ধ
শত শত টন চিনি অবিক্রিত থাকায় তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে রাজশাহী সুগার মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের।
সবশেষ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে চিনিকল বিষয়ে সার্বিক তথ্য চেয়ে পাঠানো চিঠি পেয়ে আরও আশঙ্কার মধ্যে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের শঙ্কা, সরকারি পাটকলের মতো রাজশাহী সুগার মিলও না আবার বন্ধ হয়ে যায়!
জানা গেছে, ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান গুণতে থাকা রাজশাহী সুগার মিলে মাঝখানে কয়েক বছর চিনির উৎপাদন কমতে থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা আবার বাড়ছিল।
২০১৯-২০ অর্থবছরে এক লাখ ২৯ হাজার ২৫১ টন আখ মাড়াই থেকে চিনি উৎপাদন হয়েছে সাড়ে আট হাজার টন। চলতি অর্থবছরে এক লাখ ৬০ হাজার টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
চিনি উৎপাদনে প্রতি কেজিতে ১০৮ টাকা খরচ হলেও তা সরকার নির্ধারিত বিক্রয়মূল্যে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছিল। তারপরও বাজারে দাম কমে যাওয়ায় রাজশাহী সুগার মিলের গুদামে চার মাস ধরে দুই হাজার ১৬৬ টন চিনি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, যার বাজার মূল্য ১৩ কোটি টাকা।
এত বিপুল পরিমাণ চিনি অবিক্রিত থাকায় রাজশাহী সুগার মিলের ৭২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শতাধিক শ্রমিকের তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে।
শ্রমিক ও কর্মচারীরা জানান, পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ সুগার ক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউট কৃষকদের মাঝে ভালোমানের আখের জাত সরবরাহ না করায় আখ থেকে চিনি আহরণের হার কমে গেছে। আগে যেখানে আখ থেকে চিনি আহরণের হার ৮ থেকে ৯ শতাংশ ছিল, এখন তা অনেক কমে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে চিনি আহরণের হার ছিল ৬ দশমিক ২১ শতাংশ।
এ ছাড়া, বাজারের চেয়ে সরকার নির্ধারিত দাম বেশি হওয়ায় চিনির দাম কমে গেছে। বাজারের যেখানে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা কেজি দরে, সেখানে সরকার নির্ধারিত চিনির মূল্য ৬০ টাকা কেজি।
রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রহিদুল ইসলাম কালু জানান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই চিনিকলগুলো মার খাচ্ছে। যখন চিনির দাম বাজারে বেশি, তখন চিনিগুলো ছেড়ে দেয় না। আবার বড় বড় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, তারা কম দামে বিদেশি চিনি আমদানি করে কম দামে বাজারে ছাড়েন।
তিনি বলেন, 'এসব চিনি স্বাস্থ্যসম্মত না। আর আখ থেকে মাড়াই চিনি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে ক্রপ সায়েন্স ইনস্টিটিউট থেকে যে ধরনের আখের জাত সরবরাহ করা হয়, তা থেকে চিনি আহরণের হারও খুবই কম। এসব কারণেই চিনিকলগুলো মার খাচ্ছে।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের ১৬টি চিনিকলের মধ্যে আখ থেকে চিনি আহরিত হারে তৃতীয় নম্বরে এবং চিনির গুণগতমানের দিক থেকে এক নম্বরে থাকা রাজশাহী সুগার মিলের সঙ্গে প্রায় ১১ হাজার আখচাষি জড়িত। সবমিলিয়ে প্রায় লাখখানেক মানুষের কর্মসংস্থান ঘটে এই সুগার মিলের মাধ্যমে।
সেখানে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে চিনিকলের বিষয়ে সার্বিক তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানোতে আশঙ্কার মধ্যে ফেলেছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের। তারা আশঙ্কা করছেন, সরকারি পাটকলের মতো না চিনিকলও বন্ধ করে দেওয়া হয়!
রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, 'আমরা আতঙ্কিত। এমনিতে তিন মাসের বেতন বন্ধ থাকায় আমরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। সেখানে এই ধরনের চিঠি আমাদের শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। এ রকম চিঠি কখনো দেওয়া হয় না।'
তবে রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. আবদুস সেলিম মুঠোফোনে বলেন, 'চিনি বিক্রি করে বেতন পরিশোধের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। আর চিঠি দিয়ে শুধু তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিনিকল বন্ধ করা হবে কি না, তা আলোচনা হয়নি।'