রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হলেও লোকসানে বাগান মালিকরা
দেশে অক্টোবর মাসে রেকর্ড ১৪ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হলেও খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছে চা মালিকরাা। চা পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে (শুকাতে) ব্যবহৃত ডিজেল এবং কয়লার দাম বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে উৎপাদন খরচ।
অন্যদিকে উৎপাদন খরচের তুলনায় নিলামে চায়ের দাম কমে যাওয়া এবং চা অবিক্রিত থাকায় দিন দিন লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে চা বাগান মালিকদের। এমন পরিস্থিতিতে চা উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে বাগান মালিকদের খুশি হওয়ার পরিবর্তে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশ চা বোর্ড এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বছরের প্রথম দশ মাসে দেশের ১৬৭টি চা বাগান এবং ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানে ৭৯ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। তবে এ বছর শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই রেকর্ড পরিমাণ ১৪ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে যা অতীতের যেকোনো মাসের উৎপাদন রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।
চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আলতামাস হাসান বলেন, চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বাগান মালিকরা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে বিষয়টি এমন নয়। বর্তমানে প্রতি কেজি চা উৎপাদন খরচ ২০০ টাকার বেশি পড়ছে। নিলামে চা বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায়। ফলে বিভিন্ন বাগান প্রতি কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা লোকসান দিচ্ছে।
তিনি বলেন, সিলেটে কিছু বাগানে চা পাতা শুকোতে গ্যাসের ব্যবহার হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়ে কয়লা এবং ডিজেল ব্যবহার হয়। ডিজেলের দাম কেজি প্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় বাগানে সেচ, যন্ত্রপাতি পরিচালনা সহ অন্যান্য ব্যয় বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন ব্যয় কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছেনা।
টি এসোসিয়েশন সূত্র জানায়, সর্বশেষ নিলামের ৩০ শতাংশ চা অবিক্রিত থেকে গেছে। কিছু কিছু বাগানের চা অবিক্রিত রয়েছে অর্ধেকেরও বেশি। এসব চা পরবর্তী নিলামে যোগ হলে চায়ের দাম আরো কমে যাবে।
চা বাগান মালিকরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে চায়ের ভোগ চাহিদা হ্রাস পায়। এখনো এই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ফলে চা উৎপাদন বাড়লেও তারা প্রতিনিয়ত ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ নিলাম বর্ষের প্রথম প্রতি কেজি চায়ের গড় মূল্য ছিলো ২১৩ টাকা। পরবর্তীতে নিলামগুলোতে ধাপে ধাপে ১৯১ টাকা পর্যন্ত নিলামে চা বিক্রি হয়।
চট্টগ্রামের একাধিক চা বাগান মালিক জানান, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে স্থানীয় বাজারে কয়লার দাম আবারো বেড়েছে। এতে সংকট আরো বাড়বে।
চট্টগ্রামের বারমাসিয়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক এবাদুল হক বলেন, চায়ের সর্বশেষ নিলামে ১১ হাজার কেজি চা তোলা হয়েছিলো। এর মধ্যে চা বিক্রি হয় মাত্র ৫০ শতাংশ। এর আগের ৩টি নিলামেও আমাদের বাগানের ৫০ শতাংশ চা বিক্রি হয়। অধিকাংশ চা অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। ফলে চা বাগানের উৎপাদন ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, চার মাস আগে স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি কয়লার দাম ছিলো ১৮ টাকা। এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা। আমাদের বাগানে দৈনিক কয়লার প্রয়োজন ১৫ টন। প্রতি কেজিতে বাড়তি ৮ টাকা খরচ বাড়ায় ১৫ টন অর্থাৎ ১৫ হাজার কেজিতে দৈনিক ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে।
টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্য মতে, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়ে ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে কাজ করে ৩ লক্ষাধিক শ্রমিক। এছাড়া উত্তরবঙ্গ এবং বান্দরবানে চা চাষের সাথে সম্পৃক্ত আছে আরো ৫ হাজার ক্ষুদ্র চাষী।