শামুক রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ
মাছ ধরতে গিয়ে জালে ধরা পরা গোল্ড শামুক চোখ বন্ধ করে ফেলে দেন সবাই। বড় আকারের এসব শামুক ভেঙে না দিলে হাঁসও খেতে পারে না। তবে এবার এসব শামুক রপ্তানির সুযোগ এসেছে। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের দু'টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে শামুক আমদানির অর্ডার দিয়েছে। শামুক রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশি আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সেভ অ্যান্ড সেফটি ইন্টারন্যাশনাল।
থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইউরোপে শামুক রপ্তানির অনুমতি চেয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনে সুপারিশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
সেভ অ্যান্ড সেফটি ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্বাধিকারী মো. মেহেদি হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত শামুক রপ্তানি হয়নি। আমরা ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে ১ হাজার টন করে মোট ২ হাজার টন রপ্তানির অর্ডার পেয়েছি। প্রতিকেজি শামুকের রপ্তানি মূল্য হবে প্রায় এক ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই আমরা রপ্তানি শুরু করবো।
'আমরা ভারতের একটি বড় প্রতিষ্ঠান থেকে মাছ আমদানি করি। ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রতি সপ্তাহে ২০-২৫ টন শামুক ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে রপ্তানি করে। দেশ দু'টিতে শামুকের চাহিদা বাড়ায় ভারতীয় ওই কোম্পানির মাধ্যমেই আমরা থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে রপ্তানির অর্ডার পেয়েছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে বছরে ৫০০ কোটি টাকার শামুক রপ্তানি সম্ভব'- যোগ করেন তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'রপ্তানির যেকোন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে তৎপর আমরা। তবে যেহেতু কখনও বাংলাদেশ থেকে শামুক রপ্তানি হয়নি, তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের মতামত নেওয়া হবে।'
আন্তর্জাতিক সংস্থা ফুডডাইভ এর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে শামুক রপ্তানির বাজারের আকার ১.২ বিলিয়ন ডলার। জাপান, ইতালি, চীন, ফ্রান্স, স্পেন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ বছরে প্রায় তিন লাখ টন শামুক আমদানি করে। শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- পেরু, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভারত, মেক্সিকো ও ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশ থেকে কখনও শামুক রপ্তানি হয়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান টিবিএসকে বলেন, 'যে এলাকা থেকে শামুক আহরণ করে রপ্তানি করা হবে, ওই এলাকায় সার্ভে করে দেখতে হবে কী পরিমাণ শামুক সেখানে রয়েছে এবং সেখান থেকে কী পরিমাণ সংগ্রহ করা হলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে না।'
'কোন রকম স্টাডি ছাড়া হঠাৎ করে রপ্তানি শুরু করা ঠিক হবে না'- যোগ করেন তিনি।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় জন্ম নেওয়া মেহেদী হোসেন জানান, সুন্দরবন এলাকায় মাছ ধরার জালে বিপুল পরিমাণ শামুক ধরা পড়ে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ টনের মতো শামুক পাওয়া যায়। আগে এসব এলাকার হাঁসের খামারগুলোতে এসব শামুক ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। কিন্তু লবণাক্ত পানির কারণে এখন আর হাঁসের খামার নেই। তাই জালে ধরা পরা শামুক ফেলে দেন জেলেরা। সরকার রপ্তানির অনুমতি দিলে আমরা জেলেদের কাছ থেকে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করে রপ্তানি করবো।
'রপ্তানির আগে কোন প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রয়োজন হবে না। সংগ্রহ করার ৭২ ঘন্টার মধ্যে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আমরা যেদিন সংগ্রহ করবো, ওইদিনই ঢাকায় বিমানবন্দরে এনে ফ্লাইটে পাঠিয়ে দিবো। সব মিলিয়ে আমাদের খরচ হবে প্রতিকেজি ৫০ টাকার মতো। আর রপ্তানি অর্ডার পেয়েছি প্রায় এক ডলার বা ৮৫ টাকা দরে,'- জানান মেহেদি।
মেহেদি আরও জানান, অনুমতি পেলে ৫০০ টন করে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে রপ্তানি করবেন তারা। ১ হাজার টন রপ্তানির পর নতুন করে আরও অনুমতি চাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। মালয়েশিয়ায় ঝিনুক রপ্তানির সম্ভাবনা তুলে প্রধানমন্ত্রী শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেন।
মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পুকুর, খাল, বিল, হাওর-বাওরসহ দেশের জলরাশিতে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির শামুক পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেশ শামুকের মাংস খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়া কসমেটিক শিল্পেও শামুকের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে কিছু ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক জাতিগোষ্ঠী শামুকের মাংস খায়। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়িতে বসবাসরত জনগোষ্ঠী ক্ষুদ্র পরিসরে শামুকের চাষ করছে।
শামুক বায়ো-ফিল্টার হিসেবে কাজ করে, ফলে পানির গুণাগুণ ভালো থাকে। অতিমাত্রায় আহরণের ফলে পরিবেশগত অসামঞ্জস্যতা তৈরির আশঙ্কায় প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে শামুক ও ঝিনুক সংরক্ষণ, পোনা উৎপাদন ও চাষের জন্য মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প রয়েছে।