সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ গ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে
বাজেট বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা ব্যাপক হারে কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ কম ঋণ নিয়েছে সরকার।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত 'Government Domestic Borrowing' বিষয়ক মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে জুলাই-সেপ্টেম্বরের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, এই সময়ে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যাংক ও ব্যাংকবর্হিভূত খাত থেকে ১২,৮৭৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। গেল অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৩৩,৩০৫ কোটি টাকা।
ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কেন এত কম জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গেল অর্থবছরের শেষ দিকে (মে ও জুন মাসে) বিদেশি সহায়তার পরিমাণ বেড়েছে, অন্যদিকে করোনার ফলে কমেছে সরকারি ব্যয়।
এছাড়া স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে চলে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এডিপি বাস্তবায়নের হারও অত বেশি না। মূলত এসব কারণেই রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার পরও বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে অর্থ সংকটে পড়তে হচ্ছে না।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রাজস্ব বোর্ডের কর আহরণের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ডের কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে জুলাই-সেপ্টেম্বরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ৮.০৬ শতাংশ। গেল বছরের একই সময়ে এই হারেই এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়ে থাকে ব্যাংক থেকে। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রেখে সরকার।
তবে অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংক থেকে কোন ঋণই নেয়নি সরকার। বরং আগের নেয়া ঋণের ১,০৪৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
গেল বছরের একই সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৬শ কোটি টাকা।
তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়ে গেছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও জুলাই-সেপ্টেম্বরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১১,৬৬২ কোটি টাকার। গেল অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪,৬৯৮ কোটি টাকা।
ব্যাংক আমানতের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার অনেক বেশি হওয়ায় সঞ্চয়কারীরা এদিকেই বেশি ঝুঁকছেন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান সুদের হার বিবেচনায় সরকার না চাইলেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়বেই।
যদিও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে অটোমেশন ও কর শনাক্তকরণ নম্বর বাধ্যতামূলক করা এবং ৫০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের সুযোগ না থাকায় সঞ্চয়ে বাধা তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করেন অনেকে।
সরকারের ঋণ নেওয়া আগামী মাসগুলোতে বাড়বে উল্লেখ করে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থবছরের প্রথম দিকে এডিপি বাস্তবায়নে গতি কম থাকায় সরকারের ব্যয়ের চাপ বেশি থাকে না।