সাড়ে ৮ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেল বন্ডস্টাইন
এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার বিনিয়োগ পেয়েছে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ভিত্তিক দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বন্ডস্টাইন।
রানার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রানা ট্রেনিং লিমিটেডের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ডস্টাইনে এই বিনিয়োগ করে। আজ শনিবার (২৩ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটি।
বন্ডস্টাইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (সিআইও) যাফির শাফিঈ চৌধুরী বলেন, "আমাদের লক্ষ্য আগামী ১০ বছরে আঞ্চলিক আইওটি ব্যবসায় নেতৃত্ব দেওয়া। আর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিগত বছরগুলোতে আমরা সফলতার সাথে ব্যবসা করে আসছি। আমাদের লক্ষ্য অর্জনে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলাম এই বিনিয়োগ পেয়ে।"
এটিকে আইওটি খাতে দেশের প্রথম কোনো বিনিয়োগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, "উদ্ভাবনী সেবায় এই বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী মূল্যে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসতে পারব বলে আশা করছি। প্রাপ্ত বিনিয়োগ ব্যবসা সম্প্রসারণ, নতুন প্রযুক্তির গবেষণা, কাঁচামালের মজুদ বৃদ্ধি এবং আইওটি হার্ডওয়্যার উৎপাদন সম্প্রসারণে ব্যয় করার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।"
রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম হাফিজুর রহমানও বন্ডস্টাইনের সফলতার ব্যাপারে নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, "বন্ডস্টাইনের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সক্ষমতা এবং তা ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানের পূর্ব সফলতা রয়েছে। আমাদের অভিজ্ঞতা এবং নেটওয়ার্কের সাহায্যে আমরা এই কোম্পানিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারবো।"
এই বিনিয়োগে পরামর্শক হিসেবে কাজ করে জেড এ ক্যাপিটাল। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহেদুল আরেফিন বলেন, "প্রযুক্তিগতভাবে বন্ডস্টাইনের একটি অনন্য স্থান রয়েছে। রানার এর মত সঠিক ধরনের কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের সাথে, কোম্পানিটি এখন দ্রুত বড় হবে।"
বাজারে ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং নামে পরিচিত বন্ডস্টাইনের কানেক্টেড ভেইক্যাল সেবা গ্রাহকদের পরিবহনকে দূর থেকে নজরে রাখার সুবিধা করে দিচ্ছে। চুরি যাওয়া পরিবহন ফিরে পেতেও এ প্রযুক্তি সাহায্য করছে। এছাড়াও পরিবহন খরচ বাঁচানো এবং অত্যাধুনিক ড্রাইভিং প্যাটার্ন মডেলের মাধ্যমে রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সাহায্য করছে এই প্রযুক্তি।
বন্ডস্টাইন বর্তমানে পাঁচ শতাধিক এন্টারপ্রাইজ গ্রাহককে সেবা প্রদান করছে এবং তাদের প্রায় চার কোটি ট্রিপ রিয়েল টাইমে পর্যবেক্ষণ করছে।
বন্ডস্টাইনের প্রোপাইটেরি আইওটি ক্লাউড যে কোনো রকম আইওটি হার্ডওয়্যারের সাথে কাজ করে এবং বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় পঁচিশ কোটি ডেটা রিয়েল টাইম প্রসেস করে। বর্তমানে আইওটি খাতে নিজেদেরকে নেতৃত্বস্থানীয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের অবস্থান করেছে বন্ডস্টাইন।
আইওটি ক্লাউডের উপর ভিত্তি করে বন্ডস্টাইনের পাওয়ার মনিটরিং সেবা বর্তমানে এক হাজারের বেশি টেলিকম টাওয়ারে ব্যবহৃত হচ্ছে। আইওটি বা সংযুক্ত সেবা ভবিষ্যতের ডিজিটাল লাইফস্টাইলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই লক্ষ্যে বন্ডস্টাইন স্মার্ট হোম সল্যুশন - বন্ড এর কার্যক্রম শুরু করেছে।
যখন প্রশ্নপত্র ফাঁস বাংলাদেশের জন্য এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, বন্ডস্টাইন তখন আইওটি ভিত্তিক স্মার্টবক্সের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান নিয়ে আসে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পরপর পাঁচ বছর ব্যবহার করার পর, বর্তমানে এই সেবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুচ্ছ ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষাতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই প্রশ্নফাঁস রোধমূলক প্রযুক্তি দেশব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর রবির সাথে বন্ডস্টাইনের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে।
সম্প্রতি গাজীপুরে অবস্থিত দেশের প্রথম হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করেছে বন্ডস্টাইন। বর্তমানে তারা কুয়েত এবং নেপালে আইওটি প্রযুক্তি সেবা রপ্তানি করছে। এভাবে ব্যবসায়ের পাশাপাশি দেশিয় আইওটি খাতের সম্ভাবনাকে বৈদেশিক পর্যায়েও ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা।
২০২০ সালে বন্ডস্টাইন জাতীয় আইসিটি অ্যাওয়ার্ড পায়। ২০১৯ এবং ২০২০ পরপর দুই বছর বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডেও পুরস্কৃত করা হয় তাদের। এছাড়া ২০১৫ সালে এশেলন সিঙ্গাপুরে টপ ১০০ স্টার্টআপ এবং ২০১৯ সালে ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যাওয়ার্ড এ আইওটি চ্যাম্পিয়ন হয় বন্ডস্টাইন।