সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৮.৭৭ শতাংশ বেড়েছে
আগের বছরের একই মাসের তুলনায় গত সেপ্টেম্বরে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়েছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি। বিনিয়োগ বাড়ায় চলতি মূলধনের চাহিদাই ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত মাসে আগস্টের ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ থেকে দশমিক ৩৫ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি। তবে তারপরও এর পরিমাণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ পয়েন্ট কম।
চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসময় গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখা হয়।
চলতি পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম মাসগুলোয় দেশে যখন করোনা মহামারি যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল, তখন নিম্নমুখী ছিল বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি। সবচেয়ে কম ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ ঋণ প্রবাহ রেকর্ড হয় মে মাসে।
তবে ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসায় চলতি বছরের জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে ফিরে কিছুটা পুনরুদ্ধার লাভ করে। তারপর থেকে ঋণ প্রবাহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। জুলাই ও আগস্টে যা ছিল যথাক্রমে- ৮ দশমিক ৩৮ ও ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন বিনিয়োগ উদ্যোগের কারণে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) শুরু থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ছে।
এনিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরারই ইঙ্গিত দিচ্ছে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি। তবে ব্যাংকগুলোর শুধু ভালো গ্রাহকদেরই ঋণ দেওয়া উচিত, কারণ ঋণখেলাপিদের দেওয়া হলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।
এদিকে, ঋণের সিংহভাগ গেছে আবাসিক সম্পত্তি নয়তো গাড়ি ক্রয়ে, অর্থনীতির জন্য যা ভালো-মন্দ দুটি দিকই সৃষ্টি করেছে। তবে সব মিলিয়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে সাহায্য করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির বিষয়ে গতকাল বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন জানান, বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক অর্থায়ন সহযোগিতা দেবে ব্রিটিশ সরকারের বৈদেশিক বিনিয়োগ সহযোগী সংস্থা সিডিসি। এই ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, 'এটি বেসরকারি খাতে অর্থায়ন সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুততর করতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতিরই অংশ। আমি আশা করি, সিডিসি ও তাদের স্থানীয় অংশীদার প্রাইম ব্যাংক এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করবে।'
এদিকে, আমদানি বাড়ায় টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্যও বেড়েই চলেছে।
গত আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৩০ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করেছিল। পরের মাসে এই অঙ্ক দ্বিগুণ হয়ে ৬৪ কোটি ১০ লাখ ডলারে পৌঁছায়। আর চলতি অক্টোবরের ১৯ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ১৯ দিনেই বিক্রি করেছে ৭৪ কোটি ডলার।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬৮ কোটি ডলার বিক্রির তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মেয়াদে বাংলাদেশ ১০ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। যার বিপরীতে মাত্র ৬৭৩ কোটি ডলার রপ্তানি হওয়ায় ডলার সংকট দেখা দেয়।