স্থলবন্দর দিয়ে আংশিক সুতা আমদানির অনুমতি হবে আত্মঘাতী: এনবিআরকে বিটিএমএ
বেনাপোল বন্দর দিয়ে একই এলসির বিপরীতে আংশিক শিপমেন্টের অনুমতি দেওয়া হলে তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছে দেশের টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
সংগঠনটি মনে করছে, আংশিক শিপমেন্টের অনুমতি দেওয়া হলে একই এলসির বিপরীতে কয়েকটি চালানে একই সুতার নামে অনেক ট্রাক প্রবেশ করবে। ফলে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা সুতা স্থানীয় বাজারে বিক্রয়ের কারণে দেশীয় স্পিনিং মিলগুলো অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে একসময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বিটিএমএ।
দেশে সুতার দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়ে স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলো অস্বাভাবিক মুনাফা করছে বলে অভিযোগ ইয়ার্নের মূল ক্রেতা তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও হোম টেক্সটাইল রপ্তানিকারকদের। এ কারণে স্থানীয় ইয়ার্নের ওপর অতিনির্ভরতা কমাতে আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাঁধা অপসারণের অংশ হিসেবে একই এলসির বিপরীতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আংশিক আমদানি, বেনাপোলের বাইরে অন্যান্য বন্দর দিয়ে সুতা আমদানির অনুমতি দেওয়া ও সহজ করার দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। অপরদিকে এনবিআরকে চিঠি পাঠায় হোম টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন।
বিজিএমইএ'র ওই চিঠির বিপরীতে গত বৃহস্পতিবার এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বিটিএমএ। বিটিএমএ'র ওই চিঠিতে বলা হয়, অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ দেওয়া হলে সেখানে সুতার কাউন্টের পরিমাপের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপক মিস ডিক্লারেশনের মাধ্যমে অননুমোদিত সুতা আমদানি হবে, ফলে দেশীয় টেক্সটাইল মিল অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে এবং সরকারও রাজস্ব হারাবে।
ইস্যুটি নিয়ে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিটিএমএ'র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন। এ সময় তুলার আমদানি মূল্য ও সুতার দামের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত উল্লেখ করে জানান, ইয়ার্নের অস্বাভাবিক দাম নেওয়া সম্পর্কিত অভিযোগ ভিত্তিহীন।
স্থানীয় স্পিনিং মিল মালিকরা প্রতি কেজি সুতায় প্রায় এক ডলার বেশি নিচ্ছে – এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করে বলেন, ভারতে যখন এক কেজি সুতা ৩.৮৮ ডলারে বিক্রি হচ্ছে তখন বাংলাদেশে ৪.২০ ডলার। এসময় আমদানিকৃত তুলায় সুতা উৎপাদনে প্রতি কেজিতে ব্যয় ৪.১২ ডলার হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ সময় চাহিদা ও যোগানের কারণে দামের পার্থক্যের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, "আমার লাভের হিসাব করতে হলে আমার যে অতীতে লোকসান হয়েছে, সে ভাগ তাদের নিতে হবে। আমরা যখন পুঁজি হারাই তখন তো বিজিএমইএ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। তা সত্ত্বেও সমঝোতার অংশ হিসেবে সুতার দাম না বাড়াতে আমাদের সদস্য মিল মালিকদের চিঠি দিয়েছিলাম"।
"কিন্তু মিল মালিকরা আমাকে প্রশ্ন করেছে, অতীতে বাজার কমে যাওয়ায় যখন আমাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশের আলোচনার পরও তা প্রত্যাহার করেছিলো (প্রোফরমা ইসভয়েস বা পিআই প্রত্যাহার) এবং আমাদের রেখে ভারত থেকে সুতা আমদানি করেছিলো, তখন পোশাক শিল্প সংগঠনগুলো কী উদ্যোগ নিয়েছিলো? আমি জবাব দিতে পারিনি", বলেন বিটিএমএ সভাপতি।
ইয়ার্নের সংকটের কারণ তুলে ধরে বিটিএমএ সভাপতি জানান, কোভিডের কারণে গত বছর কটনের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে ২২ শতাংশ। অন্যদিকে বৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে তুলার হারভেস্টিং কম হয়েছে ৩০ শতাংশের মতো। সহসা এ সংকট কাটার কোন আশাও দেখছেন না তিনি।
বিটিএমএ'র পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর তুলা আমদানি হবে প্রায় ৯০ লাখ বেল। কিন্তু পোশাকের রপ্তানি আদেশ বাড়ার কারণে সুতার যে চাহিদা, তা স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলো মেটাতে পারবে না বলে জানান তিনি।