হিলির বাতাসে পচা পেঁয়াজের গন্ধ
বাংলাদেশে পেঁয়াজ প্রবেশ করার জন্য ট্রাকে লোড করাই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। অবশেষে পাঁচ দিন পর সেসব পেঁয়াজ দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে।
কিন্তু ট্রাকে বোঝাই করে থাকায় অতিরিক্ত গরমে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকার পেঁয়াজ। সেসব পেঁয়াজ পচে, বস্তা দিয়ে পানি বের হচ্ছে; দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এলাকায়। শুধু দেশের এপারেই নয়, সীমান্তের ওপারে ২০০টি ট্রাকে বোঝাই থাকা পেঁয়াজেরও পচন ধরেছে।
দেশে আসা বস্তা থেকে পেঁয়াজ বের করে অনেকে ফ্যানের নিচে শুকাতে দিয়েছেন। আবার অনেকে বিক্রি করছেন নামমাত্র দামে। কারণ তাদের আশঙ্কা, যত দিন যাবে, তত পেঁয়াজ পচতে থাকবে।
এদিকে, আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের নেতা জানিয়েছেন, এখনো ভারতের ওপারে প্রায় ২০০টি ট্রাকে ছয় হাজার টন পেঁয়াজ রয়েছে। সেগুলোতেও পচন ধরেছে। এরইমধ্যে ট্রাকে লোড হওয়া সেসব পেঁয়াজ ওপারে গুদামজাত করা হচ্ছে। তবে তাদের আশঙ্কা, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রপ্তানি করতে চাইলে সেই পচা পেঁয়াজ দিয়ে না দেন!
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর এলাকার চারপাশে এখন শুধু পচা পেঁয়াজের গন্ধ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ করায় লোকসানে পড়তে হয়েছে তাদের। যেসব পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে, সেগুলো ছাড়াও যেগুলো ভালো আছে, সেগুলোরও গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যেসব পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না। তবে ভবিষ্যতে যাতে করে এমন ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
দেশের যেসব বন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর। প্রতি বছর এই বন্দর দিয়ে প্রায় দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।
হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ করে দেয় ভারত। ভারত থেকে আসা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লাফিয়ে বাড়ে পেঁয়াজের দাম।
বন্দর এলাকাতেই পাইকারি পেঁয়াজের মূল্য দ্বিগুণ হয়ে যায়। ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজ বিক্রি হতে শুরু করে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে।
ভারতীয়ের পাশাপাশি দেশি জাতের পেঁয়াজেরও দাম বৃদ্ধি পায়। এগুলো বিক্রি হয় ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে যোগাযোগের পর গত শুক্রবার রাতে ভারত সরকার পেঁয়াজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া ট্রাকগুলো ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেয়। সেই অনুযায়ী পাঁচ দিন পর শনিবার বিকেলে ১১টি ট্রাকে করে ২৪৫ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।
ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলসি খোলা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টনের। যার পরিমাণ প্রায় আড়াইশ ট্রাক। এসব এলসির বিপরীতে পেঁয়াজ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীর সহকারী মাহবুব আলম বলেন, 'কয়েকদিন ধরে ট্রাকে লোড করা থাকায় বেশিরভাগ পেঁয়াজের গুণগত মান নষ্ট হয়েছে।'
হিলি স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান লিটন বলেন, 'এখন পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে প্রায় ২০০ ট্রাক পেঁয়াজ আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সবগুলো ট্রাক দেশে প্রবেশ করতে দফায় দফায় ওপারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।'
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হারুন-উর রশিদ বলেন, 'ভারতের ওপারে প্রায় ২০০টি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আটকে রয়েছে। তবে গতকাল (রোববার) থেকে সেসব ট্রাকের পেঁয়াজ ট্রাক থেকে নামিয়ে গুদামজাত করা হচ্ছে। সেসব পেঁয়াজেও পচন ধরেছে বলে জানতে পেরেছি। এরমধ্যে যদি রপ্তানির অনুমতি দেয় ভারত, তাহলে আমাদের সেসব পেঁয়াজই নিতে হবে।'
'ভারত থেকে আমদানি করতে ১০ হাজার টন পেঁয়াজের এলসি করা আছে। এখন বেশিরভাগ পেঁয়াজেই পচন ধরেছে বলে জানতে পেরেছি। যদি পচা পেঁয়াজ দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে', যোগ করেন তিনি।