৫ প্রকল্পের জন্য জাইকার সাথে ২.৮০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির আশা বাংলাদেশের
জাপান সরকারের আন্তজার্তিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে চলতি জাপানি অর্থবছর ২০২১ এ (এপ্রিল ২০২০-মার্চ ২০২১) প্রায় ২.৮০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হতে পারে আশা করছে সরকার। জাইকার ৪২তম অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (ওডিএ) প্যাকেজের আওতায় এ ঋণ পাওয়া যাবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা আশা করছেন।
এর আগে ৪১তম লোন প্যাকেজের আওয়ায় জাইকার সঙ্গে সরকারের ৩.১৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয়ছিল জাপানি অর্থবছর ২০২০ এ।
ইআরডি সূত্র জানায়, ৪২তম লোন প্যাকেজে অবকাঠামোগত পাঁচ খাতে ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। প্রকল্পগুলো হলো- ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন ১ (সেকেন্ড ট্রেঞ্চ), ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন ৬ (ফিফথ ট্রেঞ্চ), মাতারবাড়ি কয়লা চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প (সিক্সথ ট্রেঞ্চ), মাতারবাড়ি কয়লা চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প (২য় পর্ব) এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্প।
এছাড়া স্বাস্থ্য খাত উন্নয়ন নীতি ঋণ দেবে বলে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে।, এর আগে গত অর্থবছর সরকার স্থাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছিল জাইকার কাছে। জাপানি অর্থবছর ২০২১ এ ঋণ পাওয়া যাবে বলে ইতোমধ্যে নিশ্চয়তা দিয়েছে জাপান সরকার।
৪২ তম লোন প্যাকেজে এবার তিন ধাপে চুক্তি হবে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে মাতারবাড়ি কয়লা চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প (সিক্সথ ট্রেঞ্চ) এবং ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন ৬ (ফিফথ ট্রেঞ্চ) দুই প্রকল্পের জন্য ১.০৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি চলতি মাসে হতে পারে। দুই প্রকল্পেই প্রায় সমপরিমাণ ঋণ পাওয়া যাবে জানান ইআরডির কর্মকর্তরা।
জাইকা ঋণ দেয় প্যাকেজভিত্তিক। প্রকল্পের গুরুত্ব ও অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে জাপানি অর্থবছরে কয়েক ধাপে ঋণ চুক্তি হয় । এ কারণে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চলতি জাপানি অর্থবছরে ৬ষ্ঠ কিস্তি এবং মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) প্রকল্পের জন্য ৫ম কিস্তির ঋণ চুক্তি হবে এবার।
চলমান এই দুই প্রকল্পে দ্রুত অর্থছাড়ের প্রয়োজন। এ কারণে এ দুই প্রকল্পে ঋণ চুক্তি প্রক্রিয়া আগেই শেষ করতে চায় সরকার। প্রক্রিয়া শেষ হলে বাকি প্রকল্পের জন্য আলাদা ঋণ চুক্তি সই হবে।
কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ বলেন, মাতারবাড়ি প্রকল্পে ৬ষ্ঠ কিস্তির ঋণের বিষয়ে সিপিজিসিবিএল ও জাইকার মধ্যে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। এখন ইআরডি এ ঋণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ করবে। আশা করা হচ্ছে জাপানি অর্থবছর ২০২১ এ ঋণের অর্থ ব্যবহার করা যাবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালের জুলাইতে শুরু হয় মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ। এই প্রকল্পের আওতায় বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে চ্যানেলের গভীরতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধির কাজ নতুন করে যোগ হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে জাইকার ঋণ। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
জাইকার ২৮,৩৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। নতুন প্রস্তাবে জাইকার ঋণ বেড়ে ৪৪,৪২৭ কোটি টাকা হয়েছে।
২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নতুন প্রস্তাবনায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গত জুন (২০২১) পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৪৬.৭৪%।
এদিকে মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াটের কয়লা বিদ্যুতের নতুন আরেকটি প্রকল্পে অর্থায়নের চেষ্টা চালিয়েছে যাচ্ছে সিপিজিসিবিএল। এ বিষয়ে জাইকার প্রাথমিক সম্মতিও পাওয়া গেছে। এর ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে বলে সিপিজিসিবিএলের কর্মকর্তারা জানান।
সিপিজিসিবিএলের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (ডিজাইন) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, মাতারবাড়িতে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু করতে চায় সরকার। এর জন্য অর্থায়নে জাইকার সঙ্গে আলোচনা চলছে।
এদিকে আগামী বছরের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। গত আগস্ট পযর্ন্ত এ রুটের ৮৮% কাজ শেষ হয়েছে ।
আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ শেষ হয়েছে ৬৮%। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর বাস্তবায়ন কাজে গতি আরও বাড়বে বলে আশা করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা। আর এ কারণে বৈদেশিক অর্থায়নের চাহিদা বেড়েছে। জাইকাও তাদের ৪২ ওডিএ প্যাকেজে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে সম্মতি জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
২৩৪৯০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে জাইকার মোট ঋণের পরিমাণ ১৬৫৯৪ কোটি টাকা।
মেট্রোরেল বা এমআরটি-৬ ছাড়া জাইকা এবার দ্বিতীয়বারের মতো এমআরডি-১ প্রকল্পেও ঋণ দেবে। এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ আগামী জুন থেকে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ কারণে এ প্রকল্পেও জাইকার কাছ থেকে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থায়নের জন্য ঋণ চুক্তি হবে। তবে কি পরিমাণ ঋণ দেবে সে বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে বলে জানান ইআরডির কর্মকর্তারা।
সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, এমআরটি লাইন-১ বিমানবন্দর রুট এবং পূর্বাচল রুটে বিভক্ত হবে। বিমানবন্দর রুট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চলবে। এই ১৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূগর্ভস্থ বিভাগে ১২টি স্টেশন থাকবে।
এমআরটি লাইন-১ এর পূর্বাচল সেকশানটি নতুন বাজার থেকে বসুন্ধরা হয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক হয়ে পুলিশ অফিসার হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল কেন্দ্র, পূর্বাচল সেক্টর-৭ থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত চলবে। এই ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে ৯টি স্টেশন থাকবে যার মধ্যে ভূগর্ভস্থ নতুন বাজার এবং যমুনা ফিউচার পার্ক স্টেশন বিমানবন্দর রুটের অন্তর্গত থাকবে। বসুন্ধরা থেকে পূর্বাচল অংশটি এলিভেটেড করা হবে এবং এতে ৭টি স্টেশন থাকবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ধাপে জাইকার কাছে থেকে ৩৯৪৫০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়া যাবে।
এদিকে মাতারবাড়িকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করতে চায় জাপান। এ লক্ষ্যে ৪২ ওডিএ প্যাকেজের ঋণের সহায়তা দিতে জাইকা প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে।