খেলাপি ঋণ কমাতে পুনঃতফসিলের নীতি শিথিল হয়েছে, দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের
খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য নীতি শিথিল করার সমালোচনার মুখে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো এবং পেমেন্ট কমানো দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেবে বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, "ঋণের প্রবাহ যাতে যথাযথ থাকে, অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে যেন ব্যাংকগুলোও ভূমিকা রাখতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করে যাচ্ছে।"
"তারই ধারাবাহিকতায় ক্লাসিফাইড লোন নিয়ে সার্কুলারটি জারি করা হয়।"
গত সোমবার ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়ে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন নির্দেশনায় ২.৫%-৫% ডাউনপেমেন্ট দিয়ে চারবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়। এতে করে একজন ঋণখেলাপী সর্বোচ্চ ২৯ বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেতে পারেন।
এ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও খাত সংশ্লিষ্টদের সমালোচনার মুখে পড়ায় এর ব্যাখ্যা দিতে গতকাল জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
"দেশের ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা ক্লাসিফাইড লোন কম রাখার চেষ্টা করি। আমাদের দাতা সংস্থারা লোন ক্লাসিফিকেশনের ওপর গুরুত্ব দেন", বলেন সিরাজুল ইসলাম।
ডাউন পেমেন্ট কম নির্ধারণ করে দেওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, একটা প্রতিষ্ঠান ঋণ পুনঃতফসিল করতে চাইলে তাকে যদি ১৫% ডাউনপেমেন্ট দিতে হয়, তাহলে তার পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। এজন্য এটি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
"তবে এই পেমেন্ট সবার ক্ষেত্রে সমান করা হয়নি। ঋণগ্রহীতার প্রকৃত আর্থিক অবস্থা ও নগদ প্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে এটি করা হবে", বলেন তিনি।
খেলাপীরা ২৯ বছর সুবিধা পাবে না দাবি করে তিনি বলেন, একজন খেলাপী একবার পুনঃতফসিল করে যদি আবারও খেলাপী হয়ে যায়, সে যে আবার পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবে, এমন কিন্তু নয়। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত খেলাপী হয়, তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও সার্কুলারে বলা আছে।
আগে খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। নতুন সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেবে তারা খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কী করবে। আগে বিশেষ সুবিধার আওতায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। সেই ক্ষমতা এখন পুরোটাই ব্যাঙ্কের হাতে।
"খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লায়েন্টদের চেনে, তারাই এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।"
সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করবে, এখন থেকে ব্যাংকের বোর্ড ঋণ শ্রেণিবিন্যাসের কাজ করবে।
"এতে জবাবদিহিতা বাড়বে, খেলাপি কমবে।"
নতুন এই সার্কুলার বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, "কারও চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ সার্কুলারের পরে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত টাকা ফেরত দেবেন এবং খেলাপি ঋণ কমে আসবে। এখন থেকে ঋণ বিতরণকারী জুনিয়র কর্মকর্তাদেরও দায়ী করা হবে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যাংকের পর্ষদকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।"