৪৪ গার্মেন্টসের ৩,১৮৪ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি
চট্টগ্রামের শতভাগ রপ্তানিমুখী ৪৪টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩১৮৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার তথ্য পেয়েছে কাস্টম বন্ড কমিশনারেট।
কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, শুল্ক মুক্ত সুবিধা নিয়ে তৈরি পোশাকের কাঁচামাল আমদানি করে সেগুলো পুনরায় রপ্তানি করে না প্রতিষ্ঠানগুলো।
২০২১-২২ অর্থবছরে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরীক্ষায় এমন তথ্য পায় কাস্টম বন্ড কমিশনারেট। ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব আদায় করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইতোমধ্যে নোটিশও দিয়েছে কাস্টমস।
চট্টগ্রাম কাস্টম বন্ড কমিশনারেট সুত্র জানায়, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলোর অডিটে এই শুল্ক ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়েও শুল্ক ফাঁকির তথ্ও অডিটে উঠে আসে।
সরকার দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পকে উৎসাহ দিতে পোশাক তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। এই সুবিধাকে বন্ড সুবিধা বলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে পোষাক তৈরি করে সেগুলো পুনরায় রপ্তানি করার কথা।
কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধা নিয়ে তৈরি পোশাকের কাঁচামাল আমদানি করে সেগুলো দেশের বাজারে বিক্রি করে দেয়। আবার আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করার কথা তার চেয়ে কম পরিমাণ রপ্তানি করে।
চট্টগ্রাম কাস্টম বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটনের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাবীনামা সম্বলিত কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান জবাবও দিয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান সময় চেয়েছে। গার্মেন্টস মালিকদের শুনানি শেষে চূড়ান্ত বিচারাদেশ দেওয়া হবে।
কাস্টমস বন্ড এর তথ্য অনুযায়ী বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে লেমন্ড অ্যাপারেল অ্যান্ড টেক্সটাইল, এ অ্যান্ড বি আউটওয়্যার লিমিটেড, কোল্ড প্লে স্কুল প্রোডাক্টস লিমিটেড, ওয়াটার টেক লিমিটেড, ইয়াং অ্যান ইন্টারন্যাশনাল বিডি, জেপি সোয়েটারস লিমিটেড, এশিয়ান অ্যাপারেল লিমিটেড, জিল ওয়ারেস লিমিটেড, পিআরএম ফ্যাশনস প্রাইভেট লিমিটেড, হেলা ক্লোথিং (বিডি) ) লিমিটেড, লিজেন্ড টেক্সটাইল লিমিটেড, সি ব্লু টেক্সটাইল লিমিটেড, ওয়ার্ল্ড ইয়ে ড্রেস প্যান্টস লিমিটেড, তোয়ালে বাংলাদেশ লিমিটেড, এইচএইচএইচ এক্সেসরিজ ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, এটিএস পার্ল লিমিটেড, আল গালেব ফ্যাশন লিমিটেড, কটনেক্স ফ্যাশনস লিমিটেড এবং অ্যাপোলো সেলাই অ্যান্ড গার্মেন্টস লিমিটেড।
শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ আছে রিদম ফ্যাশন লিমিটেড, সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড, চিটাগাং এশিয়ান অ্যাপারেলস, সুপার প্যাকেজিং, গ্লোবাল স্পেশালাইজড গার্মেন্টস, বায়োজিদ অ্যাপারেল, আল আমিন গার্মেন্টস, বারিধি গার্মেন্টস, উইঙ্ক কোম্পানি লিমিটেড, মিঠুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, লিগ্যাসি ফ্যাশন লিমিটেড, পদ্মা ওয়্যারস লিমিটেড, ড্রিম নিটিং লিমিটেড, অ্যাপস লিমিটেড, হাসিব অ্যাপারেল, নাবা এক্সপোর্ট লিমিটেড, বায়োজিদ ড্রেসেস, হংকং ডেনিম (প্রাইভেট), সাজ ফ্যাশন, সিয়াম সুপিরিয়র, পেনিনসুলা গার্মেন্টস, থিয়ানিস অ্যাপারেলস লিমিটেড, অথেনটিক গার্মেন্টস, আসিফ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ, আইডাস ফ্যাশন লিমিটেডের বিরুদ্ধেও।
বন্ড কমিশনারেটের তথ্যমতে, চিটাগাং এশিয়ান অ্যাপারেলস তিনবার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে, অন্যদিকে লিগ্যাসি ফ্যাশন লিমিটেড, সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড, লেমন্ড অ্যাপারেল অ্যান্ড টেক্সটাইল দুইবার।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান থিয়ানিস অ্যাপারেলস লিমিটেড ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৬৮৯ কোটি ৫৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৫ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়। চলতি বছরের মে মাসে কাস্টমসের অডিটে এই তথ্য উঠে আসে।
থিয়ানিস অ্যাপারেলসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আনিসুর রহমান খানের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানায় দেওয়া মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সাড়া দেননি।
তবে শুল্ক ফাঁকির সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, অডিটের নামে গার্মেন্টস শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ তুলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া অযৌক্তিক।
অডিট চলাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা না দিলেও হয়রানির উদ্দেশ্যে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে নোটিশ দেয় বলে অভিযোগ তাদের।
এদিকে কাস্টমস্ বন্ড কমিশনারেট কর্তৃক পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে দাবীনামা জারিকে একতরফা বলছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, শর্ট শিপমেন্টকৃত পণ্য চালানের তথ্যাদি কাস্টমস্ হাউজ, চট্টগ্রামে এ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে হাল-নাগাদ না হওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে প্রত্যাবাসিত রপ্তানি মূল্য ওভারডিউ দেখাচ্ছে।
'বন্ড কর্তৃক উক্ত শর্ট শিপমেন্টকৃত চালানের মূল্যের ওভারডিউ এর তথ্য সমূহের বিপরীতে দাবীনামা জারি করা হচ্ছে,' বলেন তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনায় উক্ত বিষয়টি এ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে হাল-নাগাদকরণের জন্য কাস্টমস্ হাউজ, চট্টগ্রামে জমা দিয়েছে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে দাবীনামা না করে সময় দেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
'সংশ্লিষ্ট পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের রপ্তানিতে স্থানীয় ভাবে ক্রয়কৃত কাপড় ও আনুসাঙ্গিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করেছে। কিন্তু ইউটিলাইজেশন ডিকলারেনে (ইউডি) তা উল্লেখ করেনি। এক্ষেত্রে বন্ড কর্তৃক উক্ত বিষয়ে দাবীনামা জারি করা হয়।
'পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনায় ৩০ জুন তারিখের মধ্যে তা ইউডি'তে অন্তর্ভুক্ত করেছে মর্মে জানা যায়। তাই এ বিষয়ে জারীকৃত দাবীনামা সমূহ সমন্বয় করা যেতে পারে,' যোগ করেন তিনি।