১৪ বছরে ভারতে গমের মজুত সর্বনিম্ন, আরও শঙ্কায় আমদানি
বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির করণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গম আমদানিতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। অন্যদিকে ভারতের গমের মজুত ১৪ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় রপ্তানি বন্ধের পরও বাংলাদেশকে গম দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ছিল সেটাও ঝুঁকিতে পড়ে গেল।
ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (এফসিআই) বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, ভারতের গমের মজুত বর্তমানে ২৮.৫ মিলিয়ন টনে নেমেছে, যা ২০০৮ সালের পর সর্বনিম্ন। অথচ গত ১ মে রপ্তানি বন্ধের পরও বিশ্বব্যাপী সংকটের মধ্যে ভারত প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশে গম রপ্তানি বন্ধ করবে না বলে জানায়।
এই ধারাবাহিকতায় তারা বাংলাদেশ থেকে একাধিকবার চাহিদাপত্রও নেয়। কিন্তু আলো ঐ পর্যন্তই আটকে আছে। রপ্তানির বিষয়ে কোন উদ্যোগ আসেনি। এই পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশকে গম রপ্তানির যে প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়েছিল সেটা শঙ্কার মধ্যে পড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (বৈদেশিক সংগ্রহ) মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার আগে ভারত থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। সেটা এখনো আসেনি, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এর মধ্যে সরকার সিঙ্গাপুরের দুটি কোম্পানি থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন করে ১ লাখ টন গম আমদানি করছে।'
তিনি বলেন, 'রপ্তানি বন্ধের পর ভারত আমাদের সরকারি-বেসরকারি চাহিদা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। সেটা আমরা জানিয়েছি। কিন্তু এরপর আর কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।'
তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন এক চিঠি দিয়ে রপ্তানি বন্ধের আগে ৬-৭ লাখ টন গমের এলসি খোলার তথ্য দিয়েছিল। চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার ভারত থেকে ১০-১২ লাখ টন গম আমদানির কথা জানিয়ে চিঠিও দেয় বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে। এসব চাহিদার তথ্য সরবরাহ করা হয় রপ্তানি বন্ধের পরও ভারতের বাংলাদেশকে গম সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা দেয়ার পর।
কিন্তু এসব তথ্য নেওয়ার পর ভারত আর সাড়াপ্রদান করেনি বলে জানা গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের মতে, অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমশ খাদ্যশস্যটির মূল্যবৃদ্ধির কারণে গম রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনা করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
এদিকে ডলারের ঊর্ধ্বগতির ফলে বাংলাদেশকে পণ্য প্রাপ্তিতেও এখন আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হবে।
এ কারণে ভারত এখন চাইলেও হয়তো যৌক্তিক কারণে বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে পারবে না।
মার্চ ও এপ্রিলে তাপপ্রবাহের কারণে ভারতীয় গম উৎপাদনকারী এলাকায় খাদ্যশস্যের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে আশানুরূপ উৎপাদনও পাওয়া যাবে না বলে মনে করছে ভারত।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকার সিঙ্গাপুরভিত্তিক দুটি কোম্পানির মাধ্যমে ১ লাখ টন গম আমদানি করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো আবার আর্জেন্টিনা থেকে গম এনে বাংলাদেশকে দিবে। এজন্য অবশ্য দাম বেশি দিতে হচ্ছে। যেখানে প্রতি বুশেল গম (২৫ কেজি) কিনতে খরচ হচ্ছে ১১.৯ ডলার।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন গম বিক্রি হচ্ছে প্রতি বুশেল ৮.১২ ডলারে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মাসখানেকের মধ্যে যেটা প্রায় ১৩ ডলারের কাছাকাছি উঠেছিল।
তবে দাম কমে যাওয়ার কারণে বেসরকারি আমদানিকারকরা যে খুব সুবিধা করতে পারছে তাও না। কারণ ডলারের দাম বেশি হওয়ার কারণে কম দামে গম পেলেও সেটার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোঃ তসলিম শাহরিয়ার বলেন, 'একদিকে বাজার সংকুচিত হয়ে গেছে। অন্যদিকে এখন বিশ্ববাজারে দাম কমার সুবিধা যখনই নিতে যাবো তখনই ডলারের দামবৃদ্ধি। ডলারের বাজারে অস্থিরতার কারণে আমরা এই সুবিধাটা পাচ্ছি না। ফলে আমাদের এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে।'
অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানতে ভারত সরকার গত ১৩ মে গম রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ দেয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল-মে মাসে দেশের মোট আমদানিকৃত গমের ৫৬ শতাংশই ছিল ভারতের, ফলে বাংলাদেশের জন্য এ ঘোষণা শংকার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উল্লেখ্য, গত মাসে আমাদের গমের মজুত নেমে যায় ১৬৬,০০০ টনে, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
২০২১ সালে ২.৩ মিলিয়ন টন গম আমদানি করে বাংলাদেশ; মিশর ও ইন্দোনেশিয়ার পর ইউক্রেন থেকে গমের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশই বাংলাদেশ।
ইউএসডিএ-র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট গম আমদানির ৪২ শতাংশই রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে এসেছিল।