খোলাবাজারে ডলারের দাম কমলেও বাড়ছে এলসি সেটেলমেন্ট রেট
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি ও বেশকিছু পদক্ষেপের কারণে খেলাবাজারে ডলারের দাম কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। তবে দেশে ডলারের সংকট এখনও বিধ্যমান থাকায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বাড়ছে, ফলে বাড়ছে এলসি সেটেলমেন্টও।
খোলাবাজারে মঙ্গলবার ডলার বিক্রি হয়েছে ১০৭ টাকায়। একইসঙ্গে আমদানিকারকরা এলসি সেটেলমেন্ট করছে ১০৫-১০৭ টাকায়।
ইন্টার মার্কেটে গত আট দিন যাবৎ ডলারের দাম একই অবস্থানে রয়েছে।
এর আগে গত ২৫ জুলাই ডলারের দাম ২৫ পয়সা বেড়ে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে এই দামে কোনো ডলার কেনাবেচা হচ্ছে না। ডলার সংকটের কারণে মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো ১১২ টাকার বেশি দামে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে।
শরীয়ভিত্তিক একটি ব্যাংকের হেড অফ ট্রেজারি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, "দেশে এখন ডলারের ব্যপক চাহিদা। অধিকাংশ ব্যাংকের ফরেন অ্যাকাউন্টে রয়েছে ডলারের ঘাটতি।"
তিনি বলেন, "মঙ্গলবার প্রবাসী আয় সংগ্রহ করা হয়েছে ১১২ টাকায়। বড় এলসির ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় শোধ করা হয়েছে ১০৭ টাকায়। যার কারণে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।"
বাধ্য হয়ে তাদের অতিরিক্ত দামে ডলার কিনতে হচ্ছে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, "সম্প্রতি আমাদের ইম্পোর্টের পরিমাণ কমে আসছে। আগামী আরও কয়েকমাস এভাবে কমলে কিছুটা ডলার মার্কেট শিথিল হয়ে আসবে।"
এদিকে সিটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা শাহ-আলম টিবিএসকে বলেন, "ইন্টার মার্কেটে ডলারের দাম পচানব্বই টাকার কম হলেও আমাদের রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে হচ্ছে এরচেয়ে বেশি দামে। মঙ্গলবার প্রবাসী রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছি ১১০-১১২ টাকায় অথচ আমদানিকারকদের ব্যয় মেটানো হয়েছে ১০৭ টাকায়। গত দুইদিন একই অবস্থানে রয়েছে।"
পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত, ৪২টিকে শোকজ
খেলাবাজারে ডলারের কারসাজি বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে বিসমিল্লাহ মানি এক্সচেঞ্জ, অঙ্কন মানি এক্সচেঞ্জ ও ফয়েজ মানি এক্সচেঞ্জসহ পাঁচটি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া ৪২ মানি এক্সচেঞ্জকে শোকজ করা হয়েছে।
শোকজের যথাযথ উত্তর দিতে পারলে এসব মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্সের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। অভিযানে আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স না নিয়ে এতদিন ব্যবসা করে আসছিল। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, "ডলারে অনিয়ম পেলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। এরই মধ্যে আমাদের অভিযানে পাঁচটি মানি চেঞ্জার হাউজকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাদের কাছে নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে। যাদের লাইসেন্স নেই তাদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে, তারা ব্যবস্থা নেবে।"
ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরার আভাস দিয়ে মুখপাত্র জানান, "ডলার সংকটের কারণে আমরা আমদানিতে বেশকিছু শর্ত দিয়েছি। এখন ৩ মিলিয়নের (৩০ লাখ ডলার) বেশি আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। আগে যেটা ছিল ৫ মিলিয়ন।"
"এতে দেখা যাচ্ছে অনেক এলসিতে অপ্রয়োজনীয় ও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। আমরা এগুলোর অনুমতি দেইনি। ফলে গত জুনের তুলনায় জুলাই মাসে আমাদের আমদানি এলসি অনেক কমেছে। এছাড়া রেমিটেন্স ও রপ্তানিও বেড়েছে। এসব দিক বিবেচনা করলে আমরা বলতে পারি বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে।"
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে। গত মে মাসের শুরুর দিকে এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। এ হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা।