ডাকার থেকে আইল অব ম্যান, মোটর স্পোর্টস মানেই বাংলাদেশি সেইফটি স্যুট
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোটরবাইক রেস আইল অব টুরিস্ট ট্রফি, আয়ারল্যান্ডের পোর্টস্টুয়ার্টে অনুষ্ঠিত নর্থ ওয়েস্ট ২০০ মোটরবাইক রেস কিংবা দ্য ডাকার র্যালি- জনপ্রিয় এসব মোটরবাইক রেসিংয়ে শীর্ষ রেসারদের সেইফটি স্যুটের দিকে লক্ষ্য করলেই আপনি দেখতে পাবেন লাল-সবুজের মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগ।
কুমিল্লা ইপিজেডের কাদেনা স্পোর্টওয়ার লিমিটেড ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের ফিনিক্স স্পোর্টসওয়ার লিমিটেড নামে কারখানা দুটি এসব সেইফটি স্যুট তৈরি করে। আলপিনেস্টারস, হারলি ডেভিডসন, রেভিটের মতো বিশ্বের নামকরা স্পোর্টসওয়ার ব্র্যান্ডের হয়ে এক যুগ ধরে পোশাক উৎপাদন করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
চীনা নাগরিক মাজহুয়াং ১৯৯০ এর দশক থেকে পোশাক উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। চীন ও ভিয়েতনামে কারখানা ছিল তার। বাংলাদেশের শ্রমের সস্তা মূল্য, শ্রমিক দক্ষতা ও অনুকূল পরিবেশের কারণে ২০১০ সালে এখানে কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেন তিনি।
ওই বছরের আগস্ট মাসে কুমিল্লা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ইপিজেড) কাদেনা স্পোর্টওয়ার লিমিটেড নামে স্পোর্টসওয়ার কারখানা শুরু করেন তিনি। শুরুতে ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে ছোট পরিসরে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) থেকে ভবন ভাড়া নিয়ে উৎপাদন শুরু করা হয়।
একটি ভবনে মাত্র দুই লাইনে ৫০ জন শ্রমিক নিয়ে উৎপাদনের প্রথম চাকা ঘুরানো হয়। প্রথম বছর প্রায় ১০ হাজার পিস প্রোডাক্ট রপ্তানি করে আয় হয় ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাজহুয়াং তার পথ চলায় শুধু এগিয়ে চলেছেন। উৎপাদনের পরিসর বাড়াতে থাকেন। এরসঙ্গে বাড়তে থাকে রপ্তানি আয়ও।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, ২০১২ সালে রপ্তানি আয় হয় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এরপর বছর বছর রপ্তানি আয় বাড়তে থাকে।
২০১৬ সালে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২০ সালে ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২১ সালে ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায় প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি আয়।
২০২২ সালে ১৮০-১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। শতভাগ উৎপাদন বাংলাদেশে হলেও চীনে মার্কেটিং এবং বিজনেস ডিভলপমেন্ট অফিস রয়েছে।
বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেড প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ১০টি প্লট এবং বেপজা থেকে ভাড়া নেওয়া ৭টি প্লটে কারখানা চলছে। ১১০ লাইনের কারখানায় উৎপাদনের চাকা ঘুরাচ্ছেন ১০ হাজার শ্রমিক।
চলতি বছরের মার্চ মাসে ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ইপিজেড) ফিনিক্স স্পোর্টসওয়ার লিমিটেড নামে নতুন কারখানা চালু করা হয়। ২৭ লাইনের এই কারখানায় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।
সবমিলিয়ে বছরে ৬ মিলিয়ন পিস পোশাক উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়া প্রতিষ্ঠানটির মূল বাজার।
প্রতিষ্ঠানটি মোট উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ মোটরবাইকের সেইফটি স্যুট। আর বাকি ৩৫ শতাংশ আউটারওয়ার। এরমধ্যে রয়েছে বৃষ্টির জন্য রেইনওয়ার, হিল মাউন্টেনের জন্য এসকেআইওয়ার, সুইমিংওয়ার, ডাউন-পেডিং জ্যাকেট, স্পোর্টস গ্লাভস। এছাড়া শীত প্রধান দেশের জন্য হিটিং জ্যাকেট ও থার্মাল প্রোডাক্ট।
অটোমেটেড রিমোর্টের মাধ্যমে এসব জ্যাকেটের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নামকরা ব্র্যান্ড ওকলি, আমের স্পোর্ট, মনবেল মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগের এসব আউটারওয়্যার পুরো বিশ্বে বাজারজাত করে।
প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল মাজেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো আমাদের ক্রেতা। সব প্রতিযোগিতায় আমাদের কারখানার উৎপাদিত পণ্য ব্যবহৃত হয়।"
তাদের পণ্যের দুই বছরের ওয়ারেন্টি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বাংলাদেশে শুধু আমরাই এই ধরনের পণ্য উৎপাদন করে থাকি। ২০১০ সালে কারখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোম্পানির পরিসর বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে প্রতি বছরই উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হয়।"
"বর্তমানে উৎপাদন খরচ বেশি হলেও মার্কেটিং পলিসি দিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। আমাদের কারখানায় যখন মোটর বাইকওয়ার উৎপাদন বেশি থাকে, তখন আউটারওয়ার উৎপাদন কিছুটা কম থাকে। যখন মোটর বাইকওয়ারের অর্ডার স্লো হয়ে যায়, তখন আউটারওয়ার উৎপাদন বাড়ানো হয়," যোগ করেন আবদুল মাজেদ।