গত বছরের নভেম্বরে ইইউ’তে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ
গেল বছরের নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৪.০৯ শতাংশ বেড়ে ১.৫৩ বিলিয়ন ইউরোতে (১.৫৭ বিলিয়ন ডলার) পৌঁছেছে। প্রাথমিকভাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার হ্রাস পাওয়ায় এ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউরোপের ২৭-দেশের পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাট-এর তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপের বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে নভেম্বর পর্যন্ত টানা চার মাস পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসের মধ্যে ৬ মাস পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে; এ সময় প্রবৃদ্ধির অঙ্ক ছিল ২০ শতাংশ থেকে প্রায় ৩৪ শতাংশের মধ্যে। আর বাকি ৫ মাসে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি (নেগেটিভ গ্রোথ) দেখা গেছে।
চাহিদা বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক পোশাক বাজার ইইউ'তে গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পোশাক রপ্তানি গড়ে ২.৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে— যা এ খাতে বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধি ০.৩৪ শতাংশের চেয়ে বেশি।
আলোচ্য চার মাসে রপ্তানির পরিমাণ ১৬.৭২ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে— যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ১৬.৩১ বিলিয়ন ইউরো।
ইউরোস্ট্যাট বলছে, নিটওয়্যার রপ্তানি ০.৮৯ শতাংশ বেড়ে ১০.০৫ বিলিয়ন ইউরো হয়েছে; এছাড়া ওভেন খাতের রপ্তানি ৫.১৩ শতাংশ বেড়ে ৬.৬৭ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস এবং সুদের হার কমে যাওয়ায় রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে; এতে করে পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যের পণ্যের অর্ডার বেড়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হলে আরও বেশি অর্ডার আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে কথা বলার সময় টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব জানান, চলমান যুদ্ধ ও মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সঙ্গে ইইউ'র পোশাক আমদানি প্রবৃদ্ধির বিষয়টি জড়িত।
২৭–দেশের বাণিজ্য ব্লকের কারণে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। এরসঙ্গে আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক; যেমন— বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনায় চীনের কিছু অর্ডার বাংলাদেশে এসেছে বলে জানান তিনি, এতে বাংলাদেশ উপকৃত হয়েছে।
সরকার যদি যথাযথ নীতি সহায়তার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখে, তাহলে আগামী মাসগুলোতে অর্ডারের এই ধারা অব্যাহত থাকার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আবদুল্লাহ হিল রাকিব।
তিনি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অগ্রাধিকার দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনেক শিল্প এলাকায় চাঁদাবাজি ব্যবসীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একইসঙ্গে তিনি জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং শ্রমের মজুরি বৃদ্ধির জন্য সাম্প্রতিক উত্থাপিত প্রস্তাবের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসবের প্রভাব সম্পর্কে তিনি উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের সতর্ক করেছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, "সরকার যদি এই প্রস্তাবনাগুলো সংশোধন না করে, তাহলে এর ফলে সামগ্রিক উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। বিশ্ব বাজারে আমাদের কম্পিটিটিভনেস আরও কমে যাবে।"
ইইউ'তে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশ
ইউরোস্ট্যাট এর তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে বিশ্ববাজার থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সামগ্রিক পোশাক আমদানি ০.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে—অর্থাৎ, গত বছরের একই সময়ের ৭৮.৩৩ বিলিয়ন ইউরো থেকে বেড়ে ৭৮.৬০ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে এ রপ্তানি।
রপ্তানিকারকদের মতে, ব্যয়-কার্যকারিতা এবং টেকসই বা স্থায়িত্ব বিবেচনায় চীনের পরে ইইউ'তে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলো বাংলাদেশ।
গত বছরের প্রথম ১১ মাসে ইইউ'তে চীনের পোশাক রপ্তানি ১.১৯ শতাংশ বেড়ে ২২.১১ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছায়—যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ২১.৮৫ বিলিয়ন ইউরো।
ইইউ'তে চীনের নিটওয়্যার রপ্তানি ৩.৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, ওভেন গার্মেন্টসের চালান ১.৩১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে তুরস্ক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি ৬.৯৯ শতাংশ কমে ৮.৬০ বিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে— এর আগের বছরে যা ৯.২৪ বিলিয়ন ইউরো ছিল।
একই সময়ে ভারত থেকে ইইউ'তে পোশাক রপ্তানি ০.৭০ শতাংশ বেড়ে ৩.৯১ বিলিয়ন ইউরো হয়েছে— যা এক বছর আগে ছিল ৩.৮৮ বিলিয়ন ইউরো।
ইইউ'তে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ২.৮৭ শতাংশ বেড়ে ৩.৬৩ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে। আগের বছরে যা ছিল ৩.৫৩ বিলিয়ন ইউরো।
আলোচ্য সময়ে ইইউ'তে কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কম্বোডিয়া থেকে ইইউ'তে পোশাক রপ্তানি গত বছরের ১১ মাসে ১৯.৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৫৮ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে—যা এর আগের বছরে ছিল ২.৯৯ বিলিয়ন ইউরো। আর পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানি ১১.১৬ শতাংশ বেড়ে ৩.২০ বিলিয়ন ইউরো হয়েছে—যা আগের বছরে ২.৮৮ বিলিয়ন ইউরো ছিল।