ব্যাংকগুলোতে ডলার প্রতি ১০৭ টাকায় এলসি নিষ্পত্তি
গত কয়েকদিন ধরে দেশের বাজারে ডলারের দাম কমছে । ব্যাংক ও খোলাবাজার, দুই জায়গাতেই দাম কমতে থাকায় মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ব্যাংকগুলো আমদানির ক্ষেত্রে লেটার অফ ক্রেডিট বা এলসি নিষ্পত্তি করেছে ডলার প্রতি সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা রেটে। কার্ব মার্কেটেও ডলারের দাম কমে ১১১ টাকায় নেমে এসেছে।
ডলার সংকটের কারণে গত ৮ অগাস্ট এলসি সেটেলমেন্ট রেট সর্বোচ্চ ১১২ টাকায় গিয়ে পৌঁছায়।
ওইদিনই ডলার কেনাবেচা থেকে মাত্রাতিরিক্ত প্রফিট করায় পাঁচটি দেশি ও একটি বিদেশি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের অপসারণ করে ব্যাংকের হিউমেন রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সিদ্ধান্তের জেরে পরদিনই এলসি সেটেলমেন্টে ১১০ টাকায় নেমে আসে ডলারের দাম।
গত বৃহষ্পতিবার সেটি আরো কমে ১০৯ টাকায় নেমে আসে। মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো এলসি সেটেলমেন্ট রেট আরো কমিয়ে ১০৭ টাকা নিয়েছে আমদানিকারকদের কাছে থেকে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলারের দাম কমতে শুরু করায় অনেক রপ্তানিকারক তাদের রপ্তানির অর্থ এনক্যাশ করাতে আসছেন ব্যাংকগুলোতে। ফলে ডলারের যোগান বাড়ছে।
রপ্তানিকারকরা এনক্যাশের ক্ষেত্রে ১০৪-১০৫ টাকা করে রেট পাচ্ছেন।
শুধু ব্যাংকগুলোই নয়, এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোও রেমিট্যান্সের ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে রেট কমিয়েছে। মঙ্গলবার হাউজগুলো রেমিট্যান্সের ডলারের জন্য ১০৮ টাকা পর্যন্ত রেট চেয়েছে। ডলার বাজারে অস্থিরতার সময়ে হাউজগুলো সর্বোচ্চ ১১২ থেকে ১১৩ টাকা দাম চেয়েছিল।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত রোববার অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএফইডিএ)-এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভায় ডলার কেনাবেচা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা প্রফিট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। শাস্তির ভয়ে ব্যাংকগুলোও তাই দাম কমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এসব কারণে ডলারের দাম কমে আসছে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার রিজার্ভ থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১.৬১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি হয়েছে।
খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১১ টাকা
ব্যাংকে ডলারের দাম কমে আসায় খোলাবাজারেও কমেছে ডলারের দাম। মঙ্গলবার দেশের বেশিরভাগ এক্সচেঞ্জ হাউজই ১১০ টাকায় ডলার কিনে ১১১ টাকায় বিক্রি করেছে।
বৃহস্পতি মানি চেঞ্জারগুলোতে ডলারের তীব্র সংকটের কারণে ১২০ টাকা ছাড়িয়েছিল ডলারের দাম। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের কারণে রোববার ডলারের দাম ৮ টাকা কমে ১১২ টাকায় নেমে আসে। মঙ্গলবার সেটি আরো ১ টাকা কমলো।
রাজধানীর মতিঝিল এলাকার মুরাদ মানি চেঞ্জারের মালিক মুরাদ হাসান টিবিএসকে বলেন,"আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে এখন বেশকিছু ডলার আছে। অনেকেই গত দুইদিন আমাদের কাছে ডলার বিক্রি করেছেন। তবে ডলারের ক্রেতা কমে এসেছে। এসব কারণে দামও কমছে।"
"মঙ্গলবার বিকেলের দিকে ১১০ টাকা রেট দিয়েও ডলার বিক্রি করতে পারিনি", যোগ করেন মুরাদ।
খোলাবাজারে ডলারের দামকে প্রভাবিত করা ও অনিয়মের দায়ে ৫টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া, নানান অভিযোগে ৪২টি মানি চেঞ্জারকে বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্কও করেছে।