১০ বছরে অর্থনৈতিক ইউনিট বেড়েছে ৪০ লাখের বেশি, সেবা খাতের আধিপত্য: ৪র্থ অর্থনৈতিক শুমারি
দেশে গত এক দশকে অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা ৪০ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯৯টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টিতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিবিএস ভবনে শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। উপপ্রকল্প পরিচালক মো. মিজানুর রহমান শুমারির বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বর্তমানে ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ২১৪টি স্থায়ী, ৫৭ লাখ ৬৬ হাজার ২১টি অস্থায়ী এবং ৫০ লাখ ১২ হাজার ৫২৯টি পারিবারিক অর্থনৈতিক ইউনিট রয়েছে।
এর মধ্যে ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ ইউনিট গ্রামে এবং ২৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ শহরে অবস্থিত।
এছাড়া, দেশের মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের মধ্যে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিল্পখাতের, আর ৯১ দশমিক ২৩ শতাংশ সেবাখাতে। শিল্পখাতের ইউনিট ২০১৩ সালে ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে কমে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বোচ্চ ২৭ দশমিক ০৩ শতাংশ অর্থনৈতিক ইউনিট ঢাকা বিভাগে অবস্থিত।
নারী নেতৃত্ব ও কর্মসংস্থানে হ্রাস
শুমারির তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক ইউনিট পরিচালনায় পুরুষের আধিপত্য এখনো ব্যাপক। ২০২৪ সালের শুমারি অনুসারে, ৯৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ ইউনিট পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হয়।
অন্যদিকে নারীদের পরিচালিত ইউনিটের সংখ্যা সাত লাখ ৬৮ হাজার ৪২টি, যা মোট ইউনিটের মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
২০১৩ সালের শুমারিতে এ হার ছিল ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। অর্থাৎ, গত এক দশকে অর্থনৈতিক ইউনিটে নারীদের অংশগ্রহণ কমেছে।
শুধু নেতৃত্ব নয়, কর্মসংস্থানেও নারীদের অংশগ্রহণ ২০১৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কমেছে। দেশে বর্তমানে ৩.০৭ কোটি শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের ৫৬.৮২ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে নিযুক্ত।
সেবা খাতের বিস্তার, শিল্প খাতের শ্লথগতি
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর মধ্যে সেবা খাতের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে।
২০১৩ সালে যেখানে সেবা খাতের ইউনিট ছিল ৬৯ লাখ ১৫ হাজার ৯৮২টি, সেখানে ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি আট লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৬টিতে।
বর্তমানে মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের ৯১ দশমিক ২৩ শতাংশই সেবা খাতভুক্ত।
অপরদিকে, উৎপাদনশীল খাতে প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম। ২০১৩ সালে শিল্প খাতের অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা ছিল নয় লাখ দুই হাজার ৫৮৩টি, যা ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৪১ হাজার ৪৬৮টি।
এ হার এক দশকে মাত্র ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ২০০১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০০ দশমিক ৪১ শতাংশ।
গ্রামাঞ্চলে অর্থনৈতিক ইউনিট বেড়েছে
২০২৪ সালের শুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনৈতিক ইউনিটগুলোর মধ্যে ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ গ্রামে অবস্থিত, যা ২০১৩ সালের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
পারিবারিক অর্থনৈতিক ইউনিটের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে—৮২ দশমিক ২০ শতাংশ ইউনিট গ্রামীণ অঞ্চলে রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে বর্তমানে ৩২০টি অর্থনৈতিক ইউনিট হিজড়া সম্প্রদায়ের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
উপপ্রকল্প পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, এটি দেশের ৪র্থ অর্থনৈতিক শুমারি। প্রথম শুমারি হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। প্রতি ১০ বছর পর পর এ শুমারি করা হয়। এবারের শুমারির প্রাক্কলিত বাজেট ছিল ৫৭৯.৫২ কোটি টাকা।