বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন থেকে অস্বাভাবিক লাভ করেছে আরও ৮টি ব্যাংক
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন থেকে সর্বোচ্চ ৭৭০ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক- ব্যাংক এশিয়ার।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডলার কেনাবেচা করে ব্যাংকটি মাত্র ২৩ কোটি টাকা লাভ করেছিল। চলতি বছরের একই সময় শেষে ব্যাংকটি লাভ করেছে ২০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৮ গুণ বেশি।
ডলার লেনদেনের মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনকারী অন্য সাতটি ব্যাংক হলো এনসিসি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রাইম ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংককে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন থেকে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের জন্য শাস্তি দিয়েছে।
ব্যাংক এশিয়া ছাড়াও নয়টি ব্যাংক এই সময়ের মধ্যে ২০০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে। এর মধ্যে দুটি ব্যাংক ডলার বাজারের অস্থির অবস্থা থেকে ১৪০ শতাংশের বেশি মুনাফা অর্জন করেছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ মুনাফা অর্জনকারী ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নিতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে ব্যাংকাররা ডলার লেনদেন থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করেছে এমন ১২টি ব্যাংকের একটি তালিকা দিয়ে প্রশ্ন তুলেন যে, কেন কেবল ছয়টি ব্যাংককে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।
সেই তালিকার ভিত্তিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন অন্যান্য ব্যাংককে অস্থির ডলারের বাজার থেকে অস্বাভাবিক মুনাফার বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, তারা সব ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন যাচাই করবেন এবং কোনো ডলার লেনদেন থেকে অস্বাভাবিক লাভ পেলে ব্যবস্থা নেবেন।
অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের প্রমাণ পাওয়ার পর ছয়টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডলারের দাম বৃদ্ধির মধ্যে জানুয়ারি থেকে জুন মাসে টাকার মূল্যমান ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। চলতি বছরের শুরুতে আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ছিল ৮৫.৮০ টাকা, যা জুন শেষে ৯৩.৪৫ টাকায় পৌঁছে।
খোলা বাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যার ফলে এলসি (লেটার অফ ক্রেডিট) নিষ্পত্তিতে আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
গত ছয় মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৬ বার টাকার অবমূল্যায়ন করেছে।
ডলারের তীব্র সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার ছাড়তে বাধ্য হয়, যার ফলে চলতি বছরের ছয় মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় চার বিলিয়ন হ্রাস পেয়েছে।
ডলার বাজারের অস্থিরতার মাঝে কয়েকটি ব্যাংক ডলার প্রতি ৫ টাকার বেশি লাভ করেছে, যা ডলার সংকটকে করে তুলেছে আরও তীব্র।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রার বাজারকে স্থিতিশীল করতে ব্যাংকের ডলার ক্রয় ও বিক্রয় হারের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ টাকা ব্যবধান নির্ধারণ করেছে।
ডলার বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংকগুলো যে মুনাফা করেছে তার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রাইম ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসে ৫০৪ শতাংশ বা ১২৬ কোটি টাকা মুনাফা বেড়েছে।
একই সময়ে, এনসিসি ব্যাংক ৫০০ শতাংশ বা ১০০ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৪১৭ শতাংশ বা ৭৫ কোটি টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৪০৩ শতাংশ বা ১১৭ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংক ৩৫৩ শতাংশ বা ১০৬ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংক ৩৪০ শতাংশ বা ১৩৬ কোটি টাকা বেশি মুনাফা করেছে।
এ ছাড়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২৪৫ শতাংশ বা ১২০ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২৩৪ শতাংশ বা ৯৭ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০৫ শতাংশ বা ১৩৫ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক ১৫৯ শতাংশ বা ৪৩ কোটি টাকা এবং ইসলামী ব্যাংকের ১৪০ শতাংশ বা ১৩৬ কোটি টাকা মুনাফা বেড়েছে।
ডলার লেনদেন থেকে আগ্রাসীভাবে মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে ডলার সংকট তীব্র করে মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি বিদেশি ব্যাংকসহ ছয়টি ব্যাংককে তাদের ট্রেজারি হেড অপসারণ করার নির্দেশ দেয়।
ব্যাংক ছয়টি হলো- সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক।