আমদানি কমার পরও জুলাইয়ে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ২০০ কোটি ডলার
বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে স্থিতিশীল রাখতে আমদানিতে নানাবিধ শর্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার ফলে আমদানি কমলেও– চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস– জুলাইয়ে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ১৯৮ কোটি ডলার।
গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ঘাটতির পরিমাণ ৪৬.৬১% বা ৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত অর্থবছর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সকল পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং টাকার বিপরীতে ডলারের শক্তিশালী মূল্যায়ন এই ঘাটতিকে প্রশস্ত করেছে।
তবে চলতি অর্থবছরের শুরুর দিক থেকেই কমতে শুরু করেছে আমদানির মূল্য পরিশোধ, অন্যদিকে বাড়ছে দেশমুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ। এই প্রবণতা বজায় থাকলে অচিরেই রিজার্ভ স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাসিক ব্যালান্স অব পেমেন্ট প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাইয়ে আমদানি হয়েছে ৫৮৬ কোটি ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৪৭৫ কোটি ডলার।
তবে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সংরক্ষণ ও ক্রমবর্ধমান ডলারের বিনিময় দর মোকাবিলায়- আমদানি সীমিত করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে জুলাই থেকেই আমদানি চালান কমে আসা শুরু হয়।
এর ফলে আগস্টে আগের মাসের চেয়ে ২০ শতাংশ কমে যায় আমদানির ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, আগস্টে এলসির মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ হয় ৫৯৩ কোটি ডলার, যা আগের মাসে ছিল ৭৪২ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশের আর্থিক খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি মুদ্রা রিজার্ভকে নিরাপদ সীমায় ধরে রাখতে নিত্যপণ্য ছাড়া বাকি সব ধরনের পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূলত আমদানি কমা ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি সংকুচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'গত অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ মানুষ চাকরির জন্য বিদেশে যান। তাদের পাঠানো আয়ও রেমিট্যান্স প্রবাহকে বাড়াবে'।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এখন রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা উঠিয়ে দিয়ে, তার বদলে প্রবাসীরা যেন তাদের পাঠানো ডলারের বাজারমূল্য পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, 'একইসময় আমাদের রপ্তানিও বাড়াতে হবে। কিন্তু, সেজন্য কাঁচামাল আমদানিও বাড়াতে হবে, নাহলে উৎপাদন পর্যায়েই ঘাটতি দেখা দিবে'।
মুদ্রাপাচারও আরো কড়াকড়িভাবে বন্ধের আহ্বানও জানান আহসান এইচ মনসুর।