পণ্যের দামে কারসাজিতে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির অভিযোগে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করলো বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, চালের দুই ব্যবসায়ী ও দুটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, আটা বাজারজাতকারী ১টি প্রতিষ্ঠান, ডিম উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী ৩টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, মুরগি উৎপাদনকারী দুটি প্রতিষ্ঠান এবং সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্ট উৎপাদন ও বাজারজাতকারী ১টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মোঃ মফিজুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করেছে তাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে চাল, ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনকারী, আটা বাজারজাতকারী এবং সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্টের উৎপাদন এবং বাজারজাতকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে।'
তবে মামলা করলেও এখনই প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করতে চাননি কমিশনের চেয়ারপারসন।
জানা গেছে, প্রতিযোগিতা কমিশনের ১৫ ও ১৬ ধারা অনুযায়ী এই মামলাগুলো করা হয়েছে। ধারা ১৫তে বলা হয়েছে, বাজারে প্রভাব বিস্তার করে মনোপলি অবস্থার সৃষ্টি করলে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। আর ধারা ১৬তে বলা হয়েছে- কোন পণ্যের বাজারজাত বা উৎপাদনে লিডিং পজিশনে থেকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্যের দামে কারসাজি করে তবে তাদের অপরাধও শাস্তিযোগ্য।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ধারাবাহিকভাবে চলতি মাসের ২৬ তারিখ থেকে কোম্পানিগুলোকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে চাল, তেল, ডিম, মুরগি ও সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্টের বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি এসব পণ্যের উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সভা করেছে। যেখানে পণ্যগুলোর দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সম্প্রতি ভোক্তা অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠান শেষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান জানান, যারা বাজারে অস্থিরতা তৈরির পেছনে দায়ী তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের তদন্ত শেষে ডিমের বাজারে কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
এদিকে কয়েকমাস ধরেই বাজারে চালের দাম বেশি। মাসখানেক আগে মোটা চালের দাম উঠেছিল ৬০ টাকায়, যা রেকর্ড পরিমাণ দাম। একইভাবে চিকন চালের দাম উঠেছিল ৮৫ টাকায়। বাজার অভিযান শুরু এবং চাল আমদানির কারণে এটা আবার কমতে শুরু করেছে।
কমিশনের চেয়ারপারসন মোঃ মফিজুল ইসলাম টিবিএসকে জানান, 'কিছু কর্পোরেট ব্যবসায়ী রয়েছে যারা ৬০-৬৫ টাকার চাল শুধু ব্যাগিং করে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করছে। এটা চালের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
একইভাবে অস্থিরতা তৈরি করে ব্যবসায়ীরা ডিমের হালি ৬০-৬৫ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকায় নিয়ে যায়। অভিযানের কারণে ডিম ও মুরগির দাম মাঝে কিছুদিন কম থাকলেও আবার বেড়ে এখন ব্রয়লার মুরগির ডিম ৪৫-৫০ টাকা হালি এবং ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অযুহাত দিলেও ভোক্তা অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে সাবান, পেস্ট ও ডিটারজেন্টের দাম যতটা বৃদ্ধির কথা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে।