নান্দোস, পেয়ালার ‘ব্যবসায় বাধা দেওয়ায়’ ফুডপান্ডাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা
বাজারে নিজের প্রভাবশালী অবস্থান অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ লঙ্ঘন করার জন্য অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম ফুডপান্ডাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)।
খাবার সরবরাহকারী প্ল্যাটফর্মটির বিরুদ্ধে এমজিএইচ রেস্টুরেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের তিন বছর আগে দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে কমিশন চূড়ান্ত রায় দেওয়ার পর জরিমানার এই সিদ্ধান্ত এলো।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিসিসি চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, 'ফুডপান্ডা নিঃসন্দেহে বাজারের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। এই অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে নান্দোস এবং পেয়ালার মতো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনায় বাধার সৃষ্টি করেছে। এই দুটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট ব্র্যান্ডের মালিক এমজিএইচ রেস্টুরেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড।'
১০ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ফুডপান্ডার ওপর বিধিনিষেধও আরোপ করেছে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ফুডপান্ডা এখন থেকে অন্য খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে রেস্তোরাঁগুলোকে বাধা দিতে পারবে না।
প্রতিযোগিতা কমিশনের এই পদক্ষেপ, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান খাবার সরবরাহ বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভোক্তা ও রেস্তোরাঁগুলোর স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রতিযোগিতামূলক বাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফুডপান্ডা বাংলাদেশের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুবায়ের বি এ সিদ্দিকী বলেন, 'আমাদের আইনজীবীরা বিষয়টি দেখছেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব।'
২০২০ সালের ডিসেম্বরে খাবার সরবরাহের বাজারে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের অপব্যবহার এবং নীতি-বহির্ভূত কার্যকলাপ পরিচালনার অভিযোগ করে এমজিএইচ রেস্টুরেন্টস।
অভিযোগে বলা হয়, এমজিএইচ রেস্টুরেন্টস ও ফুডপান্ডা বাংলাদেশ ২০১৮ সালে একটি নির্দিষ্ট কমিশনহারে ফুডপান্ডার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং সেবাসমূহ পাওয়ার জন্য চুক্তি করেছিল।
করোনা মহামারি এবং দেশব্যাপী লকডাউনের সময় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ধস নামে। রেস্টুরেন্টগুলো তখন টিকে থাকার জন্য লড়াই করতে শুরু করে।
এমজিএইচের অভিযোগে বলা হয়েছে, বাজারে প্রভাবশালী ফুডপান্ডা বাংলাদেশ তাদের অবস্থানের অপব্যবহার করে এমজিএইচের রেস্টুরেন্টহ অন্যান্য রেস্টুরেন্টকে কমিশন হার বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য 'হুমকি' দেয়।
ফুডপান্ডা জানায়, কমিশন বাড়ানো না হলে তারা খাবার সরবরাহের পরিসর কমিয়ে দেবে।
এমজিএইচের রেস্তোরাঁগুলো ওই সময় গ্রাহক কমে যাওয়া এবং পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বড় লোকসানের শিকার হয়, এজন্য তারা ফুডপান্ডাকে কমিশনের হার না বাড়াতে এবং ডেলিভারির পরিসর না কমাতে অনুরোধ করেছিল।
কিন্তু ফুডপান্ডা অনুরোধটি রাখেনি; বরং এমজিএইচের রেস্টুরেন্টগুলোর ডেলিভারির পরিসর নির্বিচারে এবং অবৈধভাবে কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে স্থগিত করে উভয়পক্ষের মধ্যকার বিদ্যমান চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে এমজিএইচের রেস্টুরেন্টগুলো ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিসিসির কাছে অভিযোগ দায়ের করে। কমিশন সেই অভিযোগটি গ্রহণ করে অভিযোগের তদন্ত করে।
এ বিষয়ে ফুডপান্ডার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'ফুডপান্ডা বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের এ আদেশ সম্পর্কে অবগত। আমরা দেশের আইনের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তবে আমরা মনে করি, আদেশটিতে শিল্পে ফুডপান্ডার অবস্থান যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। আমরা আদেশটি পর্যালোচনা করছি এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে চাই।'