ডেইরি ভ্যালু চেইন প্রকল্প: তিন বছরেও নেই বিশেষ অগ্রগতি
ডেইরি ভ্যালু চেইন তৈরি এবং কৃষকদের জন্য দুধের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর প্রায় সাড়ে তিন বছর কেটে গেছে। এতদিন পরেও শুধুমাত্র উৎপাদনকারী গ্রুপ তৈরির প্রাথমিক স্তরের কাজ এখন প্রায় শেষের দিকে।
২০১৯ সালে গৃহীত পাঁচ বছরের প্রকল্পের অধীনে ৩,৩৩৩টি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গ্রুপের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ পর্যন্ত ৩২৬৬টি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গ্রুপ গঠিত হয়েছে। এরমধ্যে প্রতিটিতে ২০ থেকে ৪০টি খামার রয়েছে।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ একটি সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের বিকাশের লক্ষ্যে এখনো দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র, ডেইরি হাব এবং প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের কাজ শুরু করতে পারেনি।
৪২৮০ কোটি টাকার প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে দুগ্ধ উৎপাদন থেকে ডেইরি হাবগুলোতে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য একটি সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে এই প্রকল্পে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩০.৫৮ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রাণিসম্পদ পরিষেবা অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন, পরামর্শক নিয়োগ এবং দুগ্ধ খামার মালিকদের প্রায় ৭০০ কোটি টাকার নগদ সহায়তা বিতরণ, ৩৬০টি ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক একত্রিকরণ ও কিছু নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আবদুর রহিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হয়েছে মূলত প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত শর্তাবলী মেনে চলার কারণে।
মহামারির কারণে দেওয়া লকডাউনেও কাজ ধীরগতিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাকি সব কাজ শেষ করার জন্য আরও দুই বছর পাবে বলে জানান তিনি।
আবদুর রহিম যোগ করেন, "আমরা বর্ধিত সময়সীমার মধ্যে সাপ্লাই চেইনের কাজ শেষ করার আশা করছি কারণ এখন আর কোনো বাধা নেই।"
একবার ডেইরি ভ্যালু চেইন তৈরি হয়ে গেলে, প্রকল্পের নথি অনুসারে দুধের উৎপাদন ২০% বৃদ্ধি পাবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে ৪০০টি গ্রাম জুড়ে। প্রকল্পের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ সহায়তা আসবে মিলিত অনুদান থেকে, বাকিটা উদ্যোক্তাদের থেকে।
সংগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের জন্য এক বা দুই মাসের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করা হবে বলেও জানা গেছে প্রকল্প সূত্রে।
প্রকল্পের নথি অনুসারে, গুণমান বজায় রাখতে ৪০০টি সংগ্রহ কেন্দ্রের মধ্যে ১৭৫টিতে দুধ শীতলকরণ কেন্দ্রও স্থাপন করা হবে।
প্রধান প্রযুক্তিগত সমন্বয়কারী ডা. মো. গোলাম রব্বানী টিবিএসকে বলেন, "সংগ্রহ কেন্দ্রগুলো ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তাদের দ্বারা পরিচালিত হবে। কিছু নীতিমালা থাকবে যা অনুযায়ী কৃষকরা তাদের কাছে ন্যায্য মূল্যে দুধ বিক্রি করবে।"
এভাবে সারাদেশে উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্রগুলোকে যেসব স্থানে বাজার ব্যবস্থাপনা দুর্বল এমন ২০টি ডেইরি কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত করা হবে।
প্রতিটি হাবকে ২০টি দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত করা হবে। বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমেও হাব স্থাপন করা হবে। তবে প্রকল্প থেকে অবকাঠামো তৈরি এবং সরঞ্জাম কেনার জন্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত প্রদান করা হবে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, দুধ সংগ্রহের পর হাবগুলোতে দুই ধরনের কাজ করা হবে। ঘি ও দইসহ বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য তৈরির জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দুধ প্রক্রিয়াজাত করা হবে। বাকিগুলো তাদের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট চুক্তি অনুযায়ী দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করা হবে। মিষ্টির দোকানগুলোও হাব থেকে দুধ সংগ্রহ করতে পারবে।
প্রাণিসম্পদ পরিসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা টিবিএসকে বলেন, "আমরা অন্যান্য দেশে দুধ প্রক্রিয়াকরণের পরিমাণ বাড়াতে চাই এবং একটি নিরাপদ সরবরাহ চেইন তৈরি করতে চাই যাতে প্রান্তিক কৃষকরাও ভালো দামে তাদের দুধ বিক্রি করতে পারে। এর ফলে প্রকল্পের বাইরের কৃষকদের দুধের চাহিদা বাড়বে এবং ন্যায্য দামও পাবে।"
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এস এম রেজাউল করিম বলেন, "আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। একইসঙ্গে উৎপাদন থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত একটি স্থায়ী সাপ্লাই চেইন তৈরির কাজ চলছে যাতে কৃষকদের কোনো সমস্যা না হয়। দুধ বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।"
তিনি আরও বলেন, "অনেক তরুণ উদ্যোক্তা প্রাণিসম্পদ খাতে প্রবেশ করেছে। তারা দুধ ও মাংস উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাদের উৎপাদন ধরে রাখতে আমরা বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কাজ করছি।"