খোলাবাজারে অবৈধ ডলার বিক্রি: আরও সাত প্রতিষ্ঠান সিলগালা
ডলারের কারসাজির অভিযোগে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ সাত প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর একাধিক অভিযান পরিচালনা করে এসব প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় এসব প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করে। এসময় অধিকাংশ মানিচেঞ্জারে অবৈধভাবে লেনদেন করতে দেখা যায়।
সিলগালা করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- নাইটিংগেল মানি এক্সচেঞ্জ, কেএমসি মানি এক্সচেঞ্জ, মেগাসিটি মানি এক্সচেঞ্জ, শেখ মানি এক্সচেঞ্জ, খান এন্ড চৌধুরি মানি এক্সচেঞ্জ, এজে মানি এক্সচেঞ্জ ও কুইক মানি এক্সচেঞ্জ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, গত দুই দিনে প্রায় ২২টি মানি চেঞ্জারে প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান করেছে তারা। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেখতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে যায় কর্মকর্তারা। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের স্থলে এখন ট্রাভেল এজেন্সিসহ নানান ব্যবসা কার্যক্রম চলছে। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া যায়নি।
এর আগে ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে ডলার কেনাবেচায় বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শোকজ করা হয়। আর ৫টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।
দেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমতে থাকায় ব্যাংকগুলোতে তরল ডলার সংকট তৈরি হয় গত এপ্রিল থেকে। প্রবাসীদের আসা কমতে থাকায় দেশে ক্যাশ ডলারের সাপ্লাই কম থাকায় গত ১২ জুলাই প্রথমবারের মতো খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয় ১০০ টাকায়।
এরপরে ক্রমান্বয়ে দাম বাড়লে-কমলেও ১০ আগস্ট ডলারের দাম বেড়ে যায় ১২০ টাকায়। এরপর ডলারের কারসাজি রোধে খোলাবাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোতে অভিযানে নামে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল সোমবার খেলাবাজারে ডলার বিক্রি হয় ১১০ টাকায়। এছাড়া ইন্টার মার্কেটে ডলার বিক্রি হয় ১০৫.২০ টাকায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি আমদানি বাবদ ডলার বিক্রি করে ৯৬ টাকায়।
যদিও গত আগস্টের শেষ দিকে অর্থ পাচারে জড়িত সন্দেহে ২৮টি মানি চেঞ্জারের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক হিসাব জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলার বেচাকেনায় কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
দেশে বর্তমানে ২৩৫টি মানি চেঞ্জার বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিলেও দেশের বাজারে ৭০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে। যার কারণে অবৈধ এসব মানিচেঞ্জারকে বন্ধের জন্য প্রশাসনের সহায়তায় নিয়মিত পরিদর্শনে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ১১ আগস্ট নগদ ডলার বেচাকেনায় মানিচেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরতা কমাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সাধারণ শাখায় নগদ ডলার বেচাকেনার অনুমোদন দেওয়া হবে মর্মে ব্যাংকগুলোকে আবেদন জানাতে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে ব্যাংকের কোন শাখায় ডলার বেচাকেনা করবে সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তালিকা পাঠিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অনুমোদন নিতে হবে। এখন পর্যন্ত ১৮২২টি শাখাকে ক্যাশ ডলার বিক্রির জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে দিনশেষে ২৫ হাজার ডলারের বেশি থাকলে তা ব্যাংক হিসাবে জমা দিতে হয়। নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ডলার বেচাকেনা, কত ডলার বেচাকেনা তার তথ্য নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দিতে হয়।