বাড়তি খরচের চাপ ব্যবসার মূলধনে, ডিজেলের দাম কমানোর দাবি পোশাক রপ্তানিকারদের
জ্বলানির দাম বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে পণ্যের উৎপাদন খরচ। আর ক্রমবর্ধমান এই খরচের চাপ গিয়ে পড়ছে ব্যবসার মূলধনের ওপর। বিশেষ করে, দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকরা বাড়তি এই চাপ সামলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
পতনের দ্বারপ্রান্তে থাকা ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে পোশাক প্রস্তুতকারকদের দাবি, সরকার যেনো বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজেলের দাম পুনর্বিন্যাস করে।
কীভাবে দ্রুত গতিতে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়েই চলেছে, সে সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ-ভিত্তিক নিট কম্পোজিট উইজডম অ্যাটায়ার্স লিমিটেডের পরিচালক অপূর্ব সিকদার বলেন, "সেপ্টেম্বরে লোডশেডিং এবং গ্যাস সংকটের কারণে জেনারেটর চালানোর জন্য আমাদের ডিজেল ব্যবহার করতে হয়েছে। এতে আমাদের অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে দেড় কোটি টাকা।"
এরপরেও, ওই মাসের গ্যাস বিল বাবদ তার কারখানা ৪৫ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"এক ডজন টি-শার্ট তৈরিতে এখন আমরা ডিজেল খরচ বাবদ ১ ডলার করে হারাচ্ছি। অথচ এই পণ্য বিক্রি করে আমাদের লাভ হয় ১ ডলারেরও কম। সুতরাং, এখন আর লাভ নয়, লোকসান গুনছি আমরা," যোগ করেন অপূর্ব।
কেবল গ্রাহকদের ধরে রাখার জন্য এখন তারা লোকসান গুনেও কারখানা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একই পরিস্থিতির কথা জানান ফতুল্লা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসানও। ইতোমধ্যেই তিনি ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাংকে অনুরোধ করেছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এক চিঠিতে পোশাক খাতের জন্য ডিজেলের দাম কমানোতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। কারণ দেশের অনেক কারখানাই এখন ব্যয়বহুল জ্বালানি ব্যবহার করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
গতবছর প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ছিল ৮০ টাকা। আর এ বছর দেশের বাজারে ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকায়। লোডশেডিং থেকে লোকসান কমাতে অনেক কারখানাই এখন চলছে ডিজেল দিয়ে। কিন্তু ডিজেলের বর্ধিত দামের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে কারখানার মালিকদের উৎপাদন অব্যাহত রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে ফারুক হাসান বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি এবং ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে উদ্যোক্তারা এখন চরম সংকটে দিন পার করছেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ডিজেলের দাম পুনর্বিন্যাসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এমনটি হলে, ব্যবসায়ীরা স্বস্তি পাবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুসারে, বুধবার (৫ অক্টোবর) রাত ৮টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৯২.৬৭ ডলার। চলতি বছরের আগস্টেও এই দাম ছিল ১২৭.৯৮ ডলার।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, গত ১৮ আগস্ট থেকে নারায়ণগঞ্জ এলাকার নিটওয়্যার রপ্তানিকারকরা তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছেন। এ ব্যাপারে তারাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত তাদের কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ থাকে ৯-১০ পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চি (পিএসআই), যা এখন ১ থেকে ১.১ পিএসআইতে নেমে এসেছে।
বিকেএমইএ'র নির্বাহী সভাপতি বলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বায়ারদের শিপমেন্টের সময়সীমা ঠিক রাখতে ডিজেল চালিত জেনারেটর ব্যবহার করে পোশাক তৈরিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে উৎপাদন হয়ে গেছে অর্ধেক, যা সেপ্টেম্বরের রপ্তানি আয়েও উঠে এসেছে।
"যদি আমরা নিটওয়্যার শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পাই, তবে আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন ২৫ শতাংশ হবে," বলেন তিনি।
গ্যাস সংকটের কারণে সেপ্টেম্বরে কারখানাগুলোর উৎপাদন অন্তত ৪৫ শতাংশ কমেছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সরকার এলএনজি আমদানির জন্য বরাদ্দ আরও ২ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে দিলে রপ্তানি আয় দ্বিগুণ হতে পারে।