ডলার বিক্রির দর ১ টাকা বাড়ালো বাংলাদেশ ব্যাংক
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে দাম ১ টাকা বাড়িয়ে ৯৭ টাকা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে আগে নেওয়া ভাসমান বিনিময় হারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো আর্থিক খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপর্যন্ত ৮ বার ডলারের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার (১২ অক্টোবর) সরকারের আমদানি পেমেন্ট নিষ্পত্তির জন্য নতুন দামে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ৮০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দাম ৯৬ টাকা নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আন্তঃব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে সব ব্যাংকই বর্তমানে ভাসমান বিনিময় দর অনুসরণ করছে। তবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে নিজেদের নির্ধারিত আলাদা দর অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাকে বলা হচ্ছে 'বাংলাদেশ ব্যাংকের সেলিং রেট'।
নাম না প্রকাশের শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, নিজস্ব রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত নতুন দরকেই বলা হচ্ছে- 'বাংলাদেশ ব্যাংকের সেলিং রেট'।
তিনি উল্লেখ করেন যে, 'আন্তঃব্যাংক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রাখতেই আমরা দর বাড়িয়ে ৯৭ টাকা করেছি'।
তবে এই নতুন বিনিময় হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকিং খাতে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। আর চলতি অর্থবছরের এপর্যন্ত আড়াই মাসেরও কম সময়ে বিক্রি করা হয়েছে ৪.০২ বিলিয়ন ডলার। বুধবার দিনশেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬.৫ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করতো সেটিকে 'ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট' বা আন্তঃব্যাংক লেনদেন হার- নামে অভিহিত করা হতো।
তবে চলমান ডলার সংকটের কারণে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের চাহিদা ও যোগানের সাথে তাল মিলিয়ে ডলারের দর নির্ধারিত না হওয়ায় ব্যাংকগুলি নিজেদের মধ্যে ডলার লেনদেন বন্ধ করে দেয়।
এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কয়েকবার টাকার অবমূল্যায়ন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের বাজার নিস্ক্রিয়ই থাকে।
চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ছিল ৮৫.৮০ টাকা। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছিল ৯৫ টাকা দরে।
ওইদিন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বাজারের অস্থিতিশীলতা হ্রাসের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অভ ব্যাংকার্স (এবিবি)'র এক সভায় রপ্তানি আয় নগদায়নে ডলারের দাম ৯৯ টাকা ও দেশে আসা রেমিট্যান্সে ১০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সভার দিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নির্ধারিত ৯৫ টাকা দরে ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে ডলার কেনাবেচার বাধ্যবাধকতাটি তুলে নেয়।
তারপর ১২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলি রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরকদের জন্য ১০৩.৫০ টাকা অভিন্ন হার নির্ধারণ করলে দীর্ঘ পাঁচ মাস নিস্ক্রিয় থাকার পর ফের সচল হয় আন্তঃব্যাংক ফরেক্স বাজার।
ওই একই দিনে, ব্যাংকগুলির কাছে ডলার বিক্রির হারের পরিবর্তে আন্তঃব্যাংক ডলার রেট হিসাবে ভাসমান হার প্রকাশ করা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।