মূল্যস্ফীতির আঁচ ব্যবসায় লাগতে দেয়নি ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড
উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে কমেছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা। কিন্তু খরচের এমন টানা-পোড়েনের মধ্যেও খাদ্য তালিকায় অনাবশ্যকীয় হরলিক্স কেনা অব্যাহত রেখেছে মানুষ। ফলে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামলে নিতে পারছে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড।
বর্তমানে হরলিক্স বিক্রি করে ইউনিলিভারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড। জিএসকে'র কাছ থেকে হরলিক্স কিনে নিয়েছিল কোম্পানিটি।
ইউনিলিভার জানায়, পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষ খাদ্য তালিকায় হরলিক্স রাখে। আর মূল্যস্ফীতির চাপে হরলিক্সের বিক্রি যেন কমে না যায়, সেজন্য মিনি প্যাকের বিক্রিতে জোর দেওয়া হয়েছে।
ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও হরলিক্সের মিনি প্যাকের দাম বাড়ানো হয়নি। যেখানে বেশি ওজনের প্যাকেটের মূল্য প্রায় ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে; কিন্তু মিনি প্যাকের বিক্রির ওপর ভর করেই হরলিক্সের বিক্রিতে মূল্যস্ফীতি আঁচ লাগতে দেয়নি কোম্পানিটি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্যমতে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
এর আগে, ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০.২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। ২০১১ সালের মে মাসের পর মূল্যস্ফীতি আর কখনো ৯ শতাংশের বেশি হয়নি।
ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার-এর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারের আয় মাত্র ৫ শতাংশ কমে ১০৭.৭৪ কোটি টাকা হযেছে। তবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি সত্ত্বেও কোম্পানিটির লাভ ১৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৮.৭২ কোটি টাকা।
আর ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে কোম্পানির আয় ১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা এবং লাভ ৪০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা।
কোম্পানির চেয়ারম্যান মাসুদ খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ভোক্তাদেরকে খাদ্য ও পানীয় আইটেমগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করেছে এবং বড় সংখ্যক ভোক্তা এখন হরলিক্সের মতো স্বাস্থ্যকর পানীয়ের জন্য কম খরচ করছেন।
তিনি বলেন, "দুধ এবং চিনিসহ এক গ্লাস হরলিক্সের দাম এখন এক বছর আগের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি পড়ছে। তবে, এক বছরে ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন নতুন পরিবারের কাছে পৌঁছাছে হরলিক্স; যার কারণে আগের ভোক্তা কমে গেলেও সেই চাপ সামলে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।"
মাসুদ খান বলেন, হরলিক্স জনসাধারণের পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এ কারণেই বাড়ানো হয়নি মিনি প্যাকের দাম। প্রতি পিস আগের ১০ টাকা খুচরা মূল্যেই বিক্রি করছে কোম্পানি।
গতবছর থেকে হরলিক্সের মোট বিক্রিতে মিনি প্যাক বিক্রির পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মোট বিক্রিতে মিনি প্যাক বিক্রির অংশ ইতোমধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন মাসুদ খান।
তিনি বলেন, এক বছর আগের তুলনায় বিক্রির পরিমাণ প্রায় সামনই ছিল; তবে ৫ শতাংশেরও কম গড় মূল্য বৃদ্ধিতে কোম্পানির রাজস্ব কিছুটা বাড়তে দেখা যায়।
বাজারের আধিপত্য সত্ত্বেও, ভোক্তাদের এই কঠিন সময়ে কোম্পানি তাদের ওপর বাড়তি খরচের সমস্ত বোঝা চাপিয়ে দিতে চায় না বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর পরিবর্তে, খরচ নিয়ন্ত্রণে কোম্পানি নিজের সর্বাধিক কর্মদক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক ব্যবসায়িক উন্নয়নের আলোকে পূর্বের দায় এবং বাধ্যবাধকতার পুনর্মূল্যায়ন থেকে ৪০ কোটি টাকার এককালীন সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমাদের ভ্যাটের (মূল্য সংযোজন কর) কিছু বিধান ছিল; তবে আমরা মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি এখন প্রয়োজন নাও হতে পারে।"
২০২১ সালে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড ৫২.৭৬ কোটি টাকা লাভ করে শেয়ারহোল্ডারদের ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এর শেয়ার দর প্রতিটি ২ হাজার ৮৪৯ টাকায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে।