আগামী সপ্তাহে চিনির নতুন দাম নির্ধারণ হতে পারে
বাজারে সরবরাহ সংকটের মধ্যেই চিনির মূল্য পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দিয়েছে। তাদের এই আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে আগামী সপ্তাহে নতুন দাম নির্ধারণ হতে পারে বলে জানা গেছে।
সোমবার সুগার রিফাইনার্স থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যায় পর্যন্ত সব ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আয়োজিত এক বৈঠকে এসব কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, 'রিফাইনার্সদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার চিনির দাম কেমন হওয়া উচিত সেটা যাচাই-বাছাই করছে। আগামী সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক মিটিং হবে। দাম বাড়বে নাকি একই থাকবে সেটা মিটিং শেষে জানা যাবে।'
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান টিবিএসকে বলেন, 'আমরা এলসি জটিলতা, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস সমস্যায় উৎপাদন সংকট সহ বিভিন্ন কারণে চিনির মূল্য পুনঃনির্ধারণের অনুরোধ করেছি। সরকার আগামী সপ্তাহে হয়তো এটা নিয়ে মিটিং করে জানাবে।'
ভোক্তা অধিদপ্তরের সভায় খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতারা সরবরাহ কম ও বাড়তি দাম দিয়ে চিনি কেনার অভিযোগ করেন। এ সময় রিফাইনার্সগুলো গ্যাসের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়াকে সরবরাহ ঘাটতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান বলেন, 'বাজারে ক্রাইসিসের পেছনে দোষ সবারই আছে। তবে আমরা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাই। এর জন্য গ্যাসের সমস্যা সমাধান করতে হবে। আর যেখানে যাদের চিনি দরকার তারা আমাদের কাছে রিকুইজিশন দিলে আমরা তা সরাসরি পৌঁছে দেব।'
দেশের বড় পাঁচটি সুগার রিফাইনারের মধ্যে রয়েছে সিটি, মেঘনা, টিকে, আব্দুল মোনেম ও দেশবন্ধু গ্রুপ। এর মধ্যে সিটি, মেঘনা ও আব্দুল মোনেমের কারখানায় গ্যাসের সংকট প্রকট। এতে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে।
মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার শফিউর রহমান বলেন, 'গ্যাসের চাপ দরকার ১৫ পিএসআই, যেখানে আমরা পাচ্ছি ৪ পিএসআই।'
সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, 'গ্যাসের কারণেই আমাদের দৈনিক ৫ হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও আমরা সেটা করতে পারছি ১৪০০-১৫০০ টন। এখন প্রতি কেজি চিনিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা বেশি কর দিতে হয়। সেটা কমিয়ে দিলেও দাম কমিয়ে আনা সম্ভব।'
চিনির বাজারে অস্থিরতার পর বাজার মনিটরিং, কারখানা পরিদর্শন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে একাধিক সভা করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। এর প্রেক্ষিতে যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে তা লিখিত আকারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, 'এলসি নিয়ে সমস্যা আছে। ট্রাকের একটা জট আছে, কারখানায় সামনে বসে থাকতে হচ্ছে। কোন কোন রিফাইনার্স সাপ্লাই অর্ডারে ইউনিট প্রাইস লিখছে না। অন্যদিকে গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় উৎপাদন কমে গেছে। এই সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'ভাউচারে ইউনিট প্রাইস না থাকলে সেখানে ম্যানিপিউলেশনের সুযোগ থাকে। কোম্পানিগুলো আজ থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক করার কথা দিয়েছে, তবে এটা কয়েকদিন সময় লাগবে। পরিবহনের সমস্যার কারণেও ডিলার, ব্যবসায়ীদের খরচ বেশি পড়ছে।'
অধিদপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রয়েছে মিলগুলোকে সর্বোচ্চ উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত রাখার নির্দেশ, মিলের বাইরে কোথাও চিনি মজুদ আছে কিনা তা নজরদারি করা, মূল্য নির্ধারণ কমিটির নিয়মিত সভা, গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ নিশ্চিত করা, ভাউচারের মাধ্যমে কেনাবেচা, এলাকাভিত্তিক ডিলার নির্ধারণ, বড় বড় পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীদের চাহিদামত সরাসরি মিল থেকে চিনি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
একইসঙ্গে চিনি উৎপাদনকারী মিলগুলোকে বাজারে চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।