শিগগিরই তুলে নেওয়া হবে লেন্ডিং রেট: আইএমএফকে বাংলাদেশ ব্যাংক
বিদ্যমান লেন্ডিং রেট শিগগিরই তুলে নেওয়া হবে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কে আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে একটি ফ্রি-ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেটে ছেড়ে দেবে বলেও জানিয়েছে তারা। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের প্রতিনিধিদের কয়েক দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলের সদস্যরা গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ও অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, "আইএমএফ ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেটের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট ফ্লোটিং রয়েছে; তবে পুরোপুরি ফ্লোটিং রেটের দিকে যাচ্ছে বলে আইএমএফকে আস্বস্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।"
বর্তমানে ফোরেক্স মার্কেটে চার ধরনের রেট রয়েছে। একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরকারি দায় মেটানোর জন্য ডলার বিক্রি রেট; ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স রেট, ইম্পোর্ট রেট ও এক্সপোর্ট প্রসিড এনক্যাশম্যন রেট।
বৃহস্পতিবার আইএমএফএর সঙ্গে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত দুই দফায় মিটিং হয়েছে। এসময় রিসেন্ট মনিটরি ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড আউটলুক, ইন্টারেস্ট রেট ডেভলপমেন্ট, সরকারি বন্ড, মনিটরি এক্সচেঞ্জ রেট, রিসার্চ ডেভলপমেন্ট, ব্যাংকিং ইস্যুস, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, এক্সটার্নাল লোন ডিসবার্সমেন্ট আইএমএফ টিএ রিপোর্টস, রিসেন্ট ট্রেড পারফর্মেন্স, রিসেন্ট এক্সচেঞ্জ পারফর্মেন্স, রিস্ক বেইসড সুপারভিসন এবং টেকনিক্যাল মিটিং অন এএমএলের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে আইএমএফ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আস্বস্ত করেছে।
তিনি আরও বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় ঋণ পাওয়ার বিষয়ে তারা কোনো শর্ত দেয়নি। তবে আর্থিক খাতের সংস্কার, নীতি ও ব্যাকিং খাতের শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডলারের বিনিময় হার প্রসঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানতে চেয়েছেন বিভিন্ন রেট প্রসঙ্গে।"
আইএমএফকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে তাদের রেট ৯৭ টাকা, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর রেট বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
দেশে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ আর আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশ কার্যকর হয়।
তবে ২০২০ সালের ৮ আগস্ট মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে বেশি রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
যদিও গত আগস্টে দেশের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.১%। তার আগের মাস জুলাইতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৫%।
মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে থাকায় ব্যাংকগুলোর আমানতের রেট বাড়লেও লেন্ডিং রেট একই থেকে যায়।
এছাড়া কোভিড পরবর্তিতে দেশের আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকগুলোর চাহিদার আলোকে ব্যাপক ডলার সাপ্লাই দিয়েছে।
চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। ফলে মার্কেট থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে চলে গেছে। এছাড়া আগের অর্থবছর ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঢোকে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা।
এ কারণে ব্যাংকগুলোর এখন ডলার সংকটের সঙ্গে তারল্য সংকটও দেখা দিয়েছে। যদিও অনেক ব্যাংকের আমানতের রেট কম থাকায় আমানতের গ্রোথ কম, এছাড়া ঋণের সুদহার কম থাকায় গ্রাহক সহজেই ঋণ নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো তারল্য সমস্যায় রয়েছে।"
আইএমএফএর হিসাবে বাংলাদেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কত- এ বিষয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে রিজার্ভের হিসাব বেশি দেখানো হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, আগে থেকে যেভাবে হিসাব হয়েছে সেই পদ্ধতিতেই রিজার্ভের গ্রস বা মোট হিসাবটাই প্রকাশ করা হচ্ছে।
তাছাড়া, দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রিজার্ভ হিসাবের পরামর্শ দিচ্ছে আইএমএফ। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেদের মত করেই হিসাব করছে।
সেই হিসাবে বর্তমানে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ৩৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করলে তা কমে দাঁড়াবে ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে।
পরবর্তী সেশনে যা নিয়ে আলোচনা হবে:
৩০ অক্টোবর পরবর্তী সিরিজের আলোচনার অংশ হিসেবে, আইএমএফ মিশন বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাথে ঝুঁকি-ভিত্তিক তত্ত্বাবধান, প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করবে।
পেমেন্টের ভারসাম্য সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে দলটি পরিসংখ্যান বিভাগের পরিচালকের সাথেও দেখা করবে।
এরপর ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসেরের সাথে দেখা করবে আইএমএফের দলটি। রাষ্ট্র-চালিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থা, নিয়ন্ত্রকের এমওইউ এর অধীনে তাদের কর্মক্ষমতা এবং এই ব্যাংকগুলোর পর্ষদে সাম্প্রতিক পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করবে তারা।
আলোচনার মধ্যে আইএমএফ-এর ইনহ্যান্সড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি, ইনহ্যান্সড ফান্ডিং ফ্যাসিলিটি প্রোগ্রাম এবং নিউ ইনিশিয়েটিভস, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফান্ড প্রোগ্রাম থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ও উঠে আসবে।