চালের দাম বাড়লেও কমেছে শীতের সবজির দাম
নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে চাল, চিনি এবং ভোজ্য তেলের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের পণ্য বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে চাল, আটা, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ১০ টাকা। তবে শীতের সব ধরনের সবজির সরবরাহ বাড়ায় কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে সবজির দাম ।
রাজধানীর নিউমার্কেট, আজমপুর, উত্তরা ও মিরপুর ১ নম্বর মার্কেট পর্যবেক্ষণের পর ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, বাজারে গমের আটা, সয়াবিন তেল, চিনি ও চালের দাম আরও বেড়েছে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে এক সপ্তাহ আগে মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না/ ইরি) ৪২ থেকে ৫২ টাকা, মাঝারি চাল (বিআর ২৮ ও পাইজাম) ৫২ থেকে ৫৮ টাকা এবং সরু চাল (নাজিরশাইল ও মিনিকেট) প্রতি কেজি চাল ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। আর গতকাল শুক্রবার (১১ নভেম্বর) মোটা চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬০ এবং সরু চাল ৬৬ থেকে ৮৪ টাকা।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স মতলব ট্রেডার্সের বিক্রেতা মোহম্মদ রায়হান বলেন, "বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। মিলারা চালের দাম বাড়িয়েছে, তাই আমাদের এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। এর প্রভাবে ভোক্তাদেরও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।"
টিসিবির হিসাবে এক সপ্তাহ আগে খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং মোড়কজাত প্রতি কেজি আটা ৫৮ থেকে ৬৩ টাকা। আর গতকাল খোলা আটা প্রতিকেজি বিক্রি হয় ৬৫ টাকায় এবং মোড়কজাত আটা ৫৮ থেকে ৭০ টাকায়।
দাম বেড়েছে ভোজ্য তেলেরও। এক সপ্তাহ আগে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ছিল ১৯০ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৭৮ থেকে ১৯২ টাকায়।
এক সপ্তাহ আগে, আমদানিকারকরা বড় দানার মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৯৮ থেকে ১০৫ টাকা, মাঝারি দানা ১১৫ থেকে ১২০ টাকা এবং ছোট দানার মসুর ডাল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
শুক্রবার তিন ধরনের মসুর ডালের দামই কেজিপ্রতি ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী এক সপ্তাহ আগে চিনি ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। অথচ গতকাল বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান ও কল্যাণপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে শীতের সবজিতে ভরে গেছে বাজার।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা কমে প্রতি কেজি সিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা ও বেগুন ৪০ টাকা। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
মানা হচ্ছে না চিনির সরকার নির্ধারিত দাম
সরকার গতমাসের শুরুতে পরিশোধিত খোলা চিনি ৯০ টাকা ও পরিশোধিত প্যাকেটজাত খোলা চিনির দাম ৯৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এ দামের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে চিনি। এরপরও চিনির সংকট রয়েছে বাজারে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাই বিক্রিও করছেন বেশি দামে।
কারওয়ান বাজারের রিফাত স্টোরের বিক্রেতা রিফাত হোসেন বলেন, "সরকার নির্ধারিত দামেতো আমরা চিনি কিনতেই পারছিনা। চিনির দাম নিয়ে আমাদের ক্রেতাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়; তারা বলে আমরা সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি। কিন্তু তারা বুঝতে চাচ্ছে না, লাভ না করে আমরা কীভাবে বিক্রি করবো।"
তিনি বলেন, "সরকারের এতো সংস্থা তবুও বাজার মনিটরিং ঠিকভাবে করতে পারছেনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে।"
হাতিরপুল এলাকার বিথি জামান বলেন, "আমার স্বামী কাপড়ের ব্যবসা করে বঙ্গবাজারে। কিন্তু সেখানে এখন যে আয় হয়, সেটা দিয়ে ৫ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।"
"এক বছর আগে বাচ্চাদের প্রতিদিন ডিম খাওয়াতাম, এখন এক সপ্তাহে একদিন ডিম খাওয়াই। আর গরুর মাংসতো কেনাই হয় না। ব্রয়লার মুরগির সপ্তাহে একদিন কেনা হয়। সেটাও এখন ১৭০ টাকা কেজি। ৩ সন্তান স্কুলে পরে ওদের স্কুলের বেতন দিতে পারছি না ৩ মাস হয়। এমন আবস্থায় আবার সব কিছুর দাম বাড়ছে, কীভাবে চালাবে সংসার?"
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরকারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে সরবরাহ চেইন উন্নত করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে করের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে সমন্বয় বা আমদানি করা যেতে পারে।"